বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনে মহাঐক্যের প্রচেষ্টা

জোট গড়তে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তেও রাজি কংগ্রেস

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের শেষ দিকে এসে বিজেপি-বিরোধী মহাজোট গঠনের উদ্যোগ জোরালো হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে প্রভাবশালী তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বে এই ঐক্যপ্রক্রিয়া চলছে। এতে প্রাথমিকভাবে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বহুজন সমাজবাদী পার্টির মায়াবতীসহ বেশকিছু বিরোধী দল বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনকে সবার আগে স্থান দেয়ার কথা জানিয়েছে। এর আগে ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীকেও জোট গঠনে তৎপর হতে দেখা গিয়েছিল। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি ২৩ মে নির্বাচনী ফল ঘোষণার আগে ২১ মে'র সম্ভাব্য বৈঠক সামনে রেখে বিজেপি-বিরোধী দলগুলোকে কাছে আনার চেষ্টা জোরালো করেছেন জোট গঠন প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক নাইডু। বৃহত্তর জোট গঠনের লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টি, আম আদমি পার্টিসহ (আপ) বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলোও থাকছে এই ঐক্যপ্রক্রিয়ায়। তবে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসকেও বিরোধী জোট গঠন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অনেকে। ২৩ মে নির্বাচনী ফল ঘোষণার আগে বিরোধী দলগুলোকে কাছে আনার চেষ্টা জোরালো করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নাইডু। এ লক্ষ্যে শুক্রবার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। ওই বৈঠকে নির্বাচন-পরবর্তী সম্ভাব্য জোট গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ২১ মে বিরোধী দলগুলোর বৈঠক ডাকায় একমত পোষণ করেন বলে নাইডু গত ৮ মে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া শিগগিরই আবার রাহুল ও মায়াবতীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি। তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান নাইডু বলেন, গেরুয়া দল-বিরোধী যেকোনো দলকেই বৃহত্তর জোটে স্বাগত জানানো হবে। শুক্রবার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনে সক্রিয় টিআরএস যদি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়, তাহলে কী হবে? জবাবে নাইডু বলেন, 'আমরা কেবল টিআরএসকে নয়, বিজেপি-বিরোধী যেকোনো দলকেই স্বাগত জানাব। এ ধরনের সব দলকেই আমাদের বৃহত্তর জোটের অংশ হতে স্বাগত জানাব। তিনি বলেন, 'আমি সবার সঙ্গেই বৈঠক করছি। সব নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর একটি পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলব।' অন্যদিকে, মহাঐক্যের এই পরিকল্পনায় শরিক হবে না বলে জানিয়েছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস)। প্রেসিডেন্ট চন্দ্রশেখর রাও-এর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আইনপ্রণেতা বিনোদ কুমার জানিয়েছেন, নির্বাচনের ফল পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করতে আগামী ২১ মে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের অংশ হবে না টিআরএস। তিনি বলেন, 'চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে কোনো বৈঠকের অংশ হতে পারব না আমরা। এটা খুবই পরিষ্কার।' বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট গড়ার চেষ্টায় মূল ভূমিকা পালন করছেন নাইডু। তবে তার এই ভূমিকাকে 'স্বঘোষিত' বলে দাবি করেন বিনোদ কুমার। রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, কংগ্রেসকে বাদ রেখে শুধু আঞ্চলিক দলগুলোর পক্ষে জোট বেঁধেও অন্তত ২৭২ আসন নিয়ে সরকার গঠন যেমন কঠিন, তেমনই কংগ্রেস এবং তার ইউপিএ শরিকরা মিলে ২৭২ আসন জিতে সরকার গড়তে পারবে- তেমনটাও এখনই জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই মোদিকে হারিয়ে বিকল্প একটি সরকার গড়তে হলে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর 'মহাঐক্য'ই যে একমাত্র পথ। জোট গড়তে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তেও রাজি কংগ্রেস এদিকে, বিজেপি-বিরোধী ঐক্য গঠনের স্বার্থে প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রী পদে ছাড় দিতেও রাজি আছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার দলটির সিনিয়র নেতা গুলাম নবি আজাদের এমন ইঙ্গিতের পর শুক্রবারও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন দলটির প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। ভারতের অন্যতম প্রাচীন দলটির এই সিনিয়র নেতারা বলেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলে প্রধানমন্ত্রী পদ দাবি করবে তবে ঐক্যের প্রয়োজনে তাতেও ছাড় দিতে রাজি আছেন তারা।