ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য মিসরের প্রস্তাবিত একটি উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির জন্য মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি একটি প্রস্তাব ঘোষণা করেছিলেন। তথ্যসূত্র : আনাদলু, আল-জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল
রোববার রাজধানী কায়রোতে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেবোউনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, 'আমরা কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে চারজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য গাজা উপত্যকায় দুই দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারপর ১০ দিনের মধ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।'
মিসরের দুই দিনের যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবটি ইসরায়েলের বেশিরভাগ মন্ত্রী সমর্থন করা সত্ত্বেও, ইসরায়েলের 'চ্যানেল টুয়েলভ' জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর বিরোধিতার কারণে তেল আবিব চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, 'গাজায় শান্তি বিষয়ক আলোচনা চলতে পারে, কিন্তু সেজন্য যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন নেই। যুদ্ধের মধ্যেই আলোচনা চলবে।'
ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাও এই প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে টেলিভিশন চ্যানেলটি। ইসরায়েলের অনুমান, তাদের প্রায় ১০১ জন নাগরিক এখনো গাজায় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা জুড়ে নির্বিচারে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তাদের মধ্যে অনেকেই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা তাদের।
এর আগেও যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে আমেরিকা, মিসর এবং কাতারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার নেওয়া উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব সত্ত্বেও এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় ধ্বংসাত্মক হামলা অব্যাহত রেখেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে ভূখন্ডের ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচু্যত হয়েছেন। সেই সঙ্গে অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ আরও বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। উপত্যকাটির ২৩ লাখের বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন। ইসরায়েল গাজায় তাদের কর্মকান্ডের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা মামলার মুখোমুখিও হয়েছে।
একেবারে যুদ্ধ বন্ধ চায় হামাস
মুক্তি দেবে সব জিম্মিকে
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ থামাতে কাতারের রাজধানী দোহায় আবারও আলোচনায় বসেছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। এরই মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের একটি সূত্র সৌদির সংবাদমাধ্যম 'আশরাক নিউজ'কে জানিয়েছেন, তারা দোহায় একটি বিস্তৃত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেবেন।
প্রস্তাব অনুযায়ী, দখলদার ইসরায়েল গাজা থেকে তাদের সব সেনাকে প্রত্যাহার করে নিয়ে যাবে এবং নির্দিষ্ট ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। অপরদিকে, হামাস একদিনে ইসরায়েলের সব জিম্মিকে ছেড়ে দেবে। আর ওইদিনই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে।
সৌদির সংবাদ মাধ্যমকে হামাসের সূত্রটি বলেছেন, 'আমরা আলোচনাকারীদের প্রস্তাব শুনব। কিন্তু আমরা একটি বিস্তৃত চুক্তি চাই। যেটি এক ধাপে হবে এবং যুদ্ধ একেবারে বন্ধ করবে। এর বদলে নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির বদলে ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন।'