ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় উত্তরাঞ্চলীয় বেইত লাহিয়া শহরে মঙ্গলবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় একটি বহুতল ভবন। হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০৯ জন। ওই ভবনে বাস্তুহারা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল -সিএনএন অনলাইন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় আবারও গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, মঙ্গলবার উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় শতাধিক বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ১০৯ জন। তাদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন বহু মানুষ। এ ঘটনায় এখনো ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে একটি বহুতল ভবনে হামলা চালানো হয়। ওই ভবনে বাস্তুহারা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স
এর আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, মঙ্গলবার সকালে চালানো এই হামলায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু পরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয় ১০৯ জন। আহত কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের কাউকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
গাজায় এখনই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত : বাইডেন
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় এখনই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মিসর দুই দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করার পর তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, 'আমাদের একটি যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। আমাদের এই যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত। এটা বন্ধ হওয়া উচিত, এটা বন্ধ হওয়া উচিত, এটা বন্ধ হওয়া উচিত।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে বাইডেন এমন সময় এই বিবৃতি দিলেন, যখন ইসরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়নি। সেখানকার মসজিদ, আবাসিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল সবখানেই তান্ডব চালিয়েছে ইসরায়েল। এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে আরও ৬০ জন নিহত
এদিকে, লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার দিনভর শক্তিশালী বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে পূর্ব লেবাননের বালবেকের কয়েকটি এলাকা। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ওই এলাকায় অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর নিরলস হামলায় লেবাননে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৭১০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২৭ জন শিশু। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৫৯২ জন।
লেবাননের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সেনারা বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এগুলো খুব গভীর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, এমনকি সুড়ঙ্গেও আঘাত হানতে সক্ষম। এ ধরনের বোমা একটি ভবনকে পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে।
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত লড়াই চলছে। এতে অনেক মানুষের মৃতু্য হয়েছে, যাদের অধিকাংশই হিজবুলস্নাহ যোদ্ধা। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন।
হিজবুলস্নাহ বলেছে, তারা হামাসের সমর্থনে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তা থামাবে না। দুটি সংগঠনই ইরান সমর্থিত।
ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা হিজবুলস্নাহর, নিহত ১
ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। মঙ্গলবার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় মালোত শহরে হিজবুলস্নাহর এই হামলায় অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও জরুরি সেবা সংস্থা রকেট হামলায় প্রাণহানির এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হিজবুলস্নাহর হামলার সময় মালোত শহরে সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। হামলার পর ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মেগান অ্যাডাম ডেভিডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা একজন সংজ্ঞাহীন পুরুষকে পেয়েছি; যার কোনো হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল না। তার শরীরে গুরুতর জখম ছিল। পরে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছি।'
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে লেবানন থেকে প্রায় ৫০টি রকেট ছোড়া হয়েছে।