বিজেপির এগিয়ে থাকা ভুল প্রমাণিত হতে পারে!

বুথফেরত জরিপ নিয়ে তরজা

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বুথ ফেরত জরিপের খবর দেখছেন দর্শক
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত জরিপের (এক্সিট পোল) ফল নিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক বিতর্ক এখন চরমে। যা থামবে আজ ফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। প্রায় প্রতিটি বুথফেরত জরিপে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পূর্বাভাস উঠে এসেছে। এসব জরিপ প্রত্যাখ্যান করে সব বিরোধীদলই অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনের বুথফেরত জরিপের ফল কখনও সম্পূর্ণ ভুল প্রমণিত হয়েছে, আবার কখনো সঠিক পূর্বাভাসও এসেছে। ফলে বিরোধীদের মতো অনেকেই বলছেন, জরিপে বিজেপির এগিয়ে থাকা ভুল প্রমাণিত হতে পারে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, হাফিংটন পোস্ট ইনডিয়া ১৯৫৭ সালে ভারতের দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনের সময় দেশটিতে প্রথম বুথফেরত জরিপ পরিচালনা করা হয়। এরপর প্রতি নির্বাচনেই এমন জরিপ হয়েছে। অতীতে এসব জরিপের ফল সঠিক ও ভুল প্রমাণিত হওয়ার নজির রয়েছে। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, তা প্রায় নজিরবিহীন। নির্বাচনের ফল সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া বিশ্বের যেকোনো দেশেই কঠিন। আর ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে তা আরও কঠিন। বুথফেরত জরিপে মোদির নেতৃত্বধীন বিজেপির অনায়াস জয় ও বিরোধী কংগ্রেসের অনেক পিছিয়ে থাকার কথা উঠে এলেও এটাকে চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে রাজি নন অনেকেই। এক্ষেত্রে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কথা তুলে আনছেন অনেকে। ব্রেক্সিট ও মার্কিন নির্বাচনে মূলধারা ও জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে যথাক্রমে ব্রেক্সিট-বিরোধী ও হিলারি ক্লিনটনের জয়ের কথা উঠে এসেছিল। কিন্তু ঘটে উল্টোটা। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনেও বুথফেরত জরিপ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতের নির্বাচনে অতীতের বুথফেরত জরিপ ও চূড়ান্ত ফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বুথ ফেরত জরিপ প্রায়ই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৪ সালে অটলবিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে বিজেপি যে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না, তা কোনো বুথ ফেরত জরিপেই আভাস পাওয়া যায়নি। ২০০৯ সালেও যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ক্ষমতায় ফিরতে পারবে, তাও উঠে আসেনি কোনো জরিপে। যদিও ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির জয়ের আভাস বুথ ফেরত জরিপে পাওয়া গেলেও ব্যবধান সঠিকভাবে উঠে আসেনি। ভারতের বিখ্যাত 'সেফোলজিস্ট' জয় এই বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন করছেন, আগে বলুন জীবনে কতবার দেখেছেন আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পূর্ণ নির্ভুল ছিল? আসলে ভারতে ভোটারদের চরিত্র এতো বৈচিত্র্যময় যে, সঠিক জরিপ পরিচালনা দুরূহ ব্যাপার। বিভিন্ন দলের ভোটের হার সঠিকভাবে আন্দাজ করতে পারলেও তাতে কতগুলো আসন জুটবে, সেটা হিসাব করা কিন্তু খুব ঝুঁকির। একটা নম্বর গেম, তার সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিক জ্ঞান সব মিলিয়েই এটা করতে হয়, আর তাতে কিছু ভুলের সম্ভাবনা থেকেই যায়।' বুথ ফেরত জরিপ ভুল প্রমাণিত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হাজির করেছেন জার্মান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এলিজাবেথ নোয়েল-নিউম্যান। এই অনুসারে, সংখ্যালঘিষ্ঠ মত ধারণকারীরা অনেক সময় ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেন না। এর ফলে সঠিক ও জরিপের ফলে বড় ব্যবধান তৈরি হয়। ভারতের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব কীভাবে কাজ করতে পারে, তা তুলে ধরেছেন লন্ডনের কিংস কলেজের প্রভাষক ও সমাজ বিজ্ঞানী কামিনী গুপ্তা। তিনি বলেন, বিজেপির নেতারা এবারের ভোটকে দেশপ্রেমের মানদন্ড হিসেবে হাজির করেছে। যারা মোদি ও বিজেপিকে ভোট দেননি, তাদের দেশবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। এই মত অনেক বিজেপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ধারন করেন। ফলে জরিপে অংশগ্রহণকারী অনেকেই ভুল তথ্য দিতে পারেন। আরও দুটি কারণ তুলে ধরেছেন কামিনী গুপ্তা। একটি হলো বিজেপি সমর্থকদের ব্যাপক প্রচারণা। ফলে তাদের বিরোধীরা আতঙ্কে নিজেদের মত হয়ত প্রকাশ করেননি। দ্বিতীয় কারণ হলো, কংগ্রেস সমর্থকদের নীরব থাকা।