প্রিয়াঙ্কাকে নামিয়েও কংগ্রেসের বিপর্যয় এড়ানো গেল না

প্রশ্নের মুখে ইইউপিএর ভবিষ্যৎ মোদির বিকল্প হিসেবে রাহুলকে এখনো ভাবতে রাজি নয় মানুষ

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরলেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ সালের সালের চেয়েও বড় জয় নিয়ে টানা দু'বার সরকার গঠন করে ইন্দিরা গান্ধীর কৃতিত্বকে ছুঁয়ে ফেললেন বিজেপি প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, প্রায় ২০১৪ সালের মতোই ফল করে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ) ভবিষ্যৎ? এখন বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন। যদিও কংগ্রেসের ঝুলিতে পাঁচ বছর আগের চেয়ে বেশি আসন এবার এসেছে। কিন্তু তাতে কিছু পরিবর্তন ঘটবে না। অন্যদিকে, দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী যেভাবে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন এবার মোদিকে হারানোর লক্ষ্যে- রাফায়েল কান্ড বা কর্মসংস্থান বিষয়ক ইসু্যগুলোর ওপর জোর দিয়েছিলেন। মাঠে নামিয়েছিলেন বোন প্রিয়াঙ্কাকেও। তারপরও এই ফলে স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের প্রবল হতাশা গ্রাস করারই কথা। উলেস্নখ্য, গত ডিসেম্বরেই হিন্দি বলয়ের তিনটি বড় রাজ্য- রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস। আর তার কিছু মাস আগে কর্ণাটকেও বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে ঠেকিয়ে রাখতে জোট বাঁধে কংগ্রেস ও জনতা দল (সেকু্যলার)। যখন ভাবা হচ্ছিল, কংগ্রেস বুঝি এবারে ঘুরে দাঁড়াবে, তখনই এই বিপর্যয়। একে কীভাবে বিশ্লেষণ করা যায়? কোথাও জোট করতে পারেননি রাহুল গান্ধী : প্রথমত, রাহুল গান্ধী এবার নিঃসন্দেহে লড়েছিলেন জান-প্রাণ দিয়ে। পরিশ্রম, নিষ্ঠা কিছুই কম দেখাননি। কিন্তু যেটা তিনি পারেননি তা হলো জোট তৈরি। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের সঙ্গে হোক বা উত্তরপ্রদেশে মহাজোট বা দিলিস্নতে আম আদমি পার্টি (আপ)- কংগ্রেস কোথাও সুবিধা করতে পারেনি। আর সেটা নিঃসন্দেহে শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতা। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছর হিন্দি বলয়ে জেতার সময়ই এবারের লোকসভা নির্বাচনের জোট তৈরির কাজ করে রাখা উচিত ছিল রাহুল গান্ধীর, যা তিনি করেননি। হয়তো ভেবেছিলেন ওই রাজ্য নির্বাচনের ফলের পরে আপনা আপনিই বিজেপি এবার হেরে যাবে, যা বাস্তবে হয়নি। মোদির বিকল্প হিসেবে রাহুলকে এখনো ভাবতে রাজি নয় মানুষ : দ্বিতীয়ত, রাহুলের নেতৃত্বের ওপর মানুষের বিশ্বাস এখনো মজবুত হয়নি, এই ফল তারই পরিচয়। হয়তো তিনি সাক্ষাৎ?কার আগের চেয়ে ভালো দিয়েছেন, নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু নিজেকে মোদির যোগ্য বিকল্প হিসেবে তৈরি করতে এখনো সফল হননি। তার জন্য যেভাবে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে চাঙ্গা করার প্রয়োজন, সেটা তিনি এখনো করে উঠতে পারেননি। মোদিকে সরাসরি নিশানা করলেও বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের কোনো পোক্ত নেতৃত্ব এবং সংগঠনই নেই, যা বিজেপির সঙ্গে পালস্না দিতে পারে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। 'সলিল সমাধি'। প্রিয়াঙ্কাকে নামিয়েও লাভ হলো না :কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ, এই নির্বাচনে শেষ তাস, অর্থাৎ? প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নির্বাচনের সাংগঠনিক কাজে নামিয়েও কোনো কাজ হলো না। এর অর্থ, গান্ধী পরিবারের গণআবেদন এবারে নিম্নমুখী এবং তা কংগ্রেসের অস্তিত্বের পক্ষে বেশ সংকটের কারণ হতে পারে আগামী দিনে। এই পরাজয়ে অন্তত এই কথাটি পরিষ্কার যে, মুখ নয়, মোদির বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়তে গেলে কংগ্রেসের চাই নতুন ভাবনা-চিন্তা। কংগ্রেসের এই শোচনীয় পরাজয়ের পর দলের মনোবল ও বাঁধন আলগা হয়ে হাতছাড়া হতে পারে মধ্যপ্রদেশ এবং কর্ণাটকের মতো দুটি বড় রাজ্য। কারণ সেখানে কংগ্রেসের (জোট) সরকার বেশ টলমল করে চলছে। আর সেই দুঃস্বপ্ন যদি সত্যি হয়, তাহলে হয়তো রাজনীতি থেকে অকালে বিদায় নেয়া ছাড়া রাহুলের আর কোনো উপায় থাকবে না। সংবাদসূত্র : ওয়ান ইনডিয়া