পশ্চিমবঙ্গে ধস, কেরালায় পতন ভারতে নিঃশেষ বামপন্থিরা!

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সংসদীয় রাজনীতিকে আপন করে নিতে এক সময় বাম দলগুলোর তাত্ত্বিক দ্বিধা ছিল। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে একবার তারা পা রাখার পর গোটা ভারতে কখনো যা হয়নি, এবার তাই হয়েছে। গোটা ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে যাচ্ছে বামপন্থিরা! সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ পশ্চিমবঙ্গে বুথ ফেরত সব জরিপ সত্য প্রমাণিত করে হাতে থাকা দুটি আসনই হারিয়েছে সিপিএম। গত বছর ত্রিপুরায় ক্ষমতা হারানোর পর সেখানে লড়াই যথেষ্ট কঠিন হয়ে গিয়েছিল। সেই ধারা বজায় রেখেই উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে জোড়া আসনই সিপিএমের হাতছাড়া। একখন্ড দ্বীপের মতো আশার বাতি জ্বলে ছিল শুধু কেরালায়। গোটা ভারত যখন নরেন্দ্র মোদির প্রত্যাবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে, মালাবার উপকূলই একমাত্র উল্টো দিকে গিয়ে বিজেপি-বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কেরালায় মোদি-বিরোধী হাওয়ার কোনো হওয়া বামপন্থিদের পালে আসেনি। গতবারের জেতা আটটি আসনের জায়গায় এবার সেখানে শাসক বাম জিতেছে মাত্র একটিতে। এই তিন রাজ্যের বাইরে বামপন্থিদের দিকে আর যেখানে সবার নজর ছিল, তার নাম বিহারের বেগুসরাই। যেখানে মোদি-বিরোধিতার মুখ হয়ে সিপিআই প্রার্থী ছিলেন কানহাইয়া কুমার। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোটযন্ত্র খোলার পর দেখা গেছে, বেগুসরাই তরুণ বাম নেতার প্রতি একটুও সদয় হয়নি। কেন এমন হলো? জওহরলাল নেহরুর আমলেও যে বামপন্থিদের পার্লামেন্টে গ্রহণযোগ্যতা ছিল, তারা এভাবে অন্ধকারে তলিয়ে গেল কেন? বাম নেতারা বলছেন, তীব্র মেরুকরণের ভোটে তারা এবার পায়ের তলায় মাটিই খুঁজে পাননি। সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘুর ধর্মীয় বিভাজনে এবারের ভোট ভাগ হয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরেরও প্রাথমিক ধারণা। সেই বিশ্লেষণ থেকেই বাম নেতাদের মনে হচ্ছে, মোদিকে হটিয়ে কেন্দ্রে তারা সরকার গড়তে পারবেন, এমন কোনো সম্ভাবনা না থাকায় তারা লড়াই থেকেই ছিটকেই গেছেন। পশ্চিবঙ্গ হোক বা কেরালা, সংখ্যালঘু মানুষের সমর্থনও তাদের দিকে আসেনি। দিলিস্নতে মোদিকে ঠেকানোর আকাঙ্ক্ষা থেকে কেরালায় ক্ষমতাসীন বামপন্থিরা পক্ষে না গিয়ে প্রায় ৪৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটই বরং মেরুকরণ হয়ে কংগ্রেসের বাক্সে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বাম দলগুলোর অবস্থা আরও সঙ্গীন। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসাব বলছে, বিজেপির ভোট এবার বেড়ে হয়েছে ৩৮.৫ শতাংশ। আর বামপন্থিদের ভোট নেমে এসেছে প্রায় ৬ শতাংশে! চার বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট পেয়েছিল প্রায় ২৬ শতাংশ ভোট। বিজেপির ভোট তখন ছিল ১০.১৬ শতাংশ। অনেকেই মনে করছেন, বামপন্থিদের যে ২০ শতাংশ ভোট ক্ষয় হয়েছে, তার পুরোটাই যোগ হয়েছে বিজেপির লাভের খাতায়! যে কারণে ভোটের আগে থেকে সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে থাকা স্স্নোগান এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব- 'বামের ভোট রামে'! বিধানসভার পর গত বছর পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম ভোট কমে এসেছিল প্রায় ১৬ শতাংশে। তাদের ছাপিয়ে রাজ্যের নানা জায়গায় তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপিই। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে স্থানীয় নানা সমীকরণ কাজ করে, কোনো দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরই সেখানে চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ থাকে না। লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থিদের এমন রক্তক্ষরণ রাজনৈতিক শিবিরে প্রবল বিস্ময় তৈরি করছে। রাজনীতির সমীকরণে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট এবং বিজেপি- দু'পক্ষেরই অবস্থান তৃণমূল-বিরোধী। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে এই দুই পক্ষের ভোট কেন মিশে গেল, তার তিন দফা কারণ উঠে আসছে প্রাথমিক পর্যালোচনায়। প্রথমত, ভারতজুড়ে মোদি সরকারের প্রত্যাবর্তনকে ঠেকানোর চেয়েও রাজ্যে তৃণমূলের হাত থেকে 'নিস্তার' পাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট শেষমুহূর্তে ভেস্তে যাওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছিল বাম শিবিরের বড় অংশে। কংগ্রেসের সঙ্গে থাকলে কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গড়ার যে বার্তা দেয়া যেত, তাও সম্ভব হয়নি। এই হতাশাই বহু বাম সমর্থকে 'পদ্মমুখী' করে তুলেছে। তৃতীয়ত, আগের নির্বাচনগুলোতে ব্যর্থ বাম নেতৃত্বের কোনো নিয়ন্ত্রণ কর্মী-সমর্থকদের ওপর কাজ করেনি। তারাই এবার তৃণমূলকে শিক্ষা দেবে, বিজেপি নেতৃত্বের এই প্রচারে বরং বাম কর্মী-সমর্থকরা বেশি ভরসা রেখেছে। ভাঙা সংগঠন নিয়েও যতটুকু কাজ করা যায়, তার বেশির ভাগটাই গেরুয়া শিবিরের পক্ষে গেছে।