মধ্যপ্রাচ্য সংকট

লেবানন-গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই

লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৩, গাজায় শিশুসহ ৩৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা কুখ্যাত গোলানি ব্রিগেডের সদর দপ্তরে হিজবুলস্নাহর ড্রোন হামলা

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
লেবাননে বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে আরও ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বৈরুতে হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। আর লেবাননের পূর্বাঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১৩ জন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী শিশুসহ আরও ৩৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ২০ জন এবং পূর্ব লেবাননে হওয়া হামলায় আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে লেবাননের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে আটজন; যাদের মধ্যে চারজন শিশু রয়েছে। এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি আবাসিক ভবনকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে ভবনটি সম্পূর্ণ ধসে পড়ে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। বৈরুতে হওয়া এই হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ও আরও ৬৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শনিবারের ওই হামলার পর স্বেচ্ছাসেবক এবং উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বুলডোজার দিয়ে খনন করে এবং ভারী সরঞ্জাম ব্যবহার করে বেঁচে থাকা লোকদের খুঁজছিলেন। এছাড়া হামলার পর আশপাশের এলাকা থেকে হতাহতদের শরীরের বিভিন্ন অংশও শনাক্ত করার কাজ চলছিল জানিয়ে মন্ত্রণালয় এক্স-এ এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ডিএনএ পরীক্ষা করার পরেই নিহতের মোট সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে। লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, রাজধানী বৈরুত ভয়ংকর গণহত্যার সাক্ষী হয়েছে। ইসরায়েলি শত্রম্নদের বিমান বাহিনী বাস্তা এলাকার আল-মামুন স্ট্রিটে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে একটি আট তলা আবাসিক ভবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। শক্তিশালী এই হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনের আশপাশের ফ্ল্যাটের বস্নকগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা এবং প্যারামেডিকরা এখনো হামলাস্থলে রয়েছেন। গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর সঙ্গে সংঘাত চলছে ইসরায়েলের। তবে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে হিজবুলস্নাহর সঙ্গে ইসরায়েলের পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী বৈরুতের পাশাপাশি লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর অপারেটিভস, অবকাঠামো এবং অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে এই হামলা চলছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত তিন হাজার ৬৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার লেবানিজ। লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ১০ লাখের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এমন অবস্থায় যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে অনেক দূরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান। কুখ্যাত গোলানি ব্রিগেডের সদর দপ্তরে হিজবুলস্নাহর ড্রোন হামলা এদিকে, হিজবুলস্নাহও ইসরায়েলে পাল্টা আঘাত হানছে। লেবাননে অভিযানরত ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের হত্যার পাশাপাশি ইসরায়েলের বেশ গভীরে সামরিক ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। পাল্টা হামলার ধারাবাহিকতায় হিজবুলস্নাহ শনিবার ইসরায়েলের কুখ্যাত গোলানি ব্রিগেড লক্ষ্য করে সফল হামলা চালিয়েছে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে গোলানি ব্রিগেড। হিজবুলস্নাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলের আক্কা শহরে অবস্থিত গোলানি ব্রিগেডের 'শারগা' প্রশাসনিক সদর দপ্তর লক্ষ্য করে এক ঝাঁক ড্রোন দিয়ে হামলা করা হয়েছে। ইরানের তৈরি কামিকাজে ড্রোনগুলো 'নিখুঁতভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আঘাত করেছে'। এছাড়াও হিজবুলস্নাহ যোদ্ধারা শনিবার দক্ষিণ লেবাননের আল-বাইয়াদা শহরে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংগঠনটি জানিয়েছে, তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়েছে। গত মাসের গোড়ার দিকে ইসরায়েলি সেনারা লেবাননে স্থল হামলা শুরু করার পর হিজবুলস্নাহ যোদ্ধাদের হাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। গোলানি ব্রিগেডকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর 'সবচেয়ে সুসজ্জিত' অভিজাত পদাতিক ইউনিটগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার পাঁচটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। গত মাসে দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে এক সংঘর্ষে এই ব্রিগেডের সাত সদস্যকে হত্যা করেছিল হিজবুলস্নাহ। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে সে সময় আরও কয়েক ডজন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়, যাদের মধ্যে ১৭ জনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।