ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আজ

পদত্যাগের হিড়িক কংগ্রেসে

দলীয় বিপর্যয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণের পাশাপাশি রাহুলের পদত্যাগের সম্ভাবনাও রয়েছে এরই মধ্যে হারের দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক ও ওড়িশার শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃত্ব

প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গেরুয়া ঝড়ের দাপটে 'শক্তিহীন' হয়ে পড়েছে ভারতের শতাব্দীপ্রাচীন দল কংগ্রেস। ক্ষমতা দখলের দৌড়ে থাকা তো দূরের কথা, আসন সংখ্যার নিরিখে তিন অঙ্কেও পৌঁছাতে পারেনি তারা। গান্ধী পরিবারের 'খাসতালুক' বলে পরিচিত আমেথিতে হেরেছেন খোদ কংগ্রেস সভাপতি নিজেই। উত্তর প্রদেশের আমেথি আসনে স্বয়ং রাহুল গান্ধীর হেরে যাওয়া রাজ্যে বিজেপির প্রবল প্রতাপের কথাই বলছে। টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে আজ (শনিবার) দিলিস্নতে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসছে। দলের এই শোচনীয় হারের দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন রাহুল, থাকছে সেই সম্ভাবনাও। যদিও তার আগেই কংগ্রেসজুড়ে শুরু হয়ে গেছে পদত্যাগের হিড়িক। সংবাদসূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস, এনডিটিভি কংগ্রেসের কাছে হারের ধাক্কা সবচেয়ে বেশি বোধ হয় উত্তরপ্রদেশেই। ৮০ আসনের এই রাজ্যে কংগ্রেস দখলে রাখতে পেরেছে সাকল্যে একটি আসন। এক সময় উত্তরপ্রদেশে রাজত্ব করা কংগ্রেস টিমটিম করে জ্বলছে শুধু গান্ধী পরিবারের আরেক খাসতালুক, সোনিয়া গান্ধীর কেন্দ্র রায়বেরেলিতে। পরাজয়ের সেই দায় মাথায় নিয়ে আজ কংগ্রেসের শীর্ষ বৈঠকের আগেই পদত্যাগের চিঠি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি রাজ বাব্বর। তিনি নিজেও বিজেপির কাছে বিপুল ভোটে হেরেছেন উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুর সিক্রি আসন থেকে। টুইট করে তিনি বলেছেন, 'উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের এই ফল অত্যন্ত হতাশাজনক। আমি সঠিকভাবে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। দলীয় নেতৃত্বকে আমি আমার বক্তব্য জানাব।' উলেস্নখ্য, এই রাজ্য থেকেই লোকসভায় সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধি যায়। তাই বলা হয়, উত্তরপ্রদেশে জেতা মানে ভারতে জেতা, যা বিজেপি করে দেখিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি এবার ৬২ আসনে জিতেছে। তবে গতবার তারা পেয়েছিল ৭২ আসন। ঐতিহ্যগতভাবে কংগ্রেসের আসন বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের আমেথিতে রাহুল পরাজিত হয়েছেন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে। তিন লাখ ভোট গণনা বাকি থাকতেই ইরানির কাছে পরাজয় মেনে নিয়েছেন তিনি। কংগ্রেসের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমেথিতে জয় পাওয়ায় স্মৃতি ইরানিকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।' অন্যদিকে, রায়বেরেলিতে নিজের আসন ধরে রেখেছেন সোনিয়া গান্ধী। ২০০৪ সাল থেকে তার দুর্গ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে আসনটি। প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে সেখানে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবারের ঘোষিত ফলে হিন্দি বলয় খ্যাত ভারতের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলীয় মানচিত্র থেকে প্রায় 'বিতাড়িত' হয়েছে কংগ্রেস। কেবল পাঞ্জাব ও কেরালায় দুটি আসনে বিজেপিকে হারিয়েছে কংগ্রেস। এরমধ্যে কেরালার ওয়ানাড়ে নিজের দ্বিতীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রাহুল বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার নিজের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয়বারের মতো লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজিত হওয়ার পর কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। তবে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও ইউপিএ জোট নেতা সোনিয়া গান্ধী প্রাথমিকভাবে তার এই প্রস্তাবে সায় দেননি। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, কর্ণাটক এবং ওড়িশা থেকেও কার্যত মুছে গেছে কংগ্রেস। ওড়িশার বিধানসভা বা লোকসভা, কোনো নির্বাচনেই দাগ কাটতে পারেনি তারা। সেই দায় মাথায় নিয়ে এরই মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন ওড়িশার কংগ্রেস সভাপতি নিরঞ্জন পট্টনায়ক। পদত্যাগ করেছেন কর্ণাটকে দলের প্রচারের দায়িত্ব থাকা এইচ কে প্যাটেলও। সাত দফায় অনুষ্ঠিত ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা হয় ২৩ মে। এদিন নির্বাচন কমিশনের দেয়া ফল অনুযায়ী, ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৩৫১টি আসন পায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পায় ৯১টি আসন। কংগ্রেসের নিজস্ব আসন বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের আমেথি আসনে বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত হয়েছেন রাহুল গান্ধী নিজেও। ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের পর লোকসভায় সর্ববৃহৎ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বিজেপি। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো রাহুলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসকে হারিয়ে লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিজেপি। বৃহস্পতিবার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এবারে কংগ্রেসের কিছু আসন বাড়লেও বিজেপির কাছে বড় ব্যবধানেই হারতে হয়েছে তাদের। দুইবারই কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহুল। তবে বৃহস্পতিবার পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে অস্বীকার করেন রাহুল। এদিন তিনি বলেন, 'আজ শুধু ভারতের রায়কে সম্মান করার দিন। আর পরাজয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সভায়।'