ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা

সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি করছেন ট্রাম্প

জরুরি অবস্থার সুযোগ ব্যবহার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের ডেমোক্রেট সদস্যরা

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক মার্কিন কংগ্রেসকে পাস কাটিয়ে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কারণে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে দাবি করে শুক্রবার ৮০০ কোটি ডলারের এই অস্ত্র বিক্রির কথা ঘোষণা করা হয়। এ ধরনের অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সাধারণত মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের দরকার হলেও জরুরি অবস্থায় প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে তা অনুমোদনের ক্ষমতা রাখেন প্রেসিডেন্ট। এ ক্ষেত্রে ওই সুযোগই ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। জরুরি অবস্থা ঘোষণার কারণ হিসেবে ইরানের কাছ থেকে হুমকি বৃদ্ধির দাবি করেছেন তিনি। সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স কংগ্রেসের কমিটিকে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের কাছে ২২তম অস্ত্র বিক্রি চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই কাজে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন কংগ্রেসের ডেমোক্রেট সদস্যরা। ইয়েমেনে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা সমরাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে দাবি করে গত কয়েক মাস ধরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রির চুক্তিটি আটকে রেখেছিল কংগ্রেস। চলতি সপ্তাহে আইনপ্রণেতা ও কংগ্রেসের সহযোগীরা হতাশা প্রকাশ করে ট্রাম্পকে বলেছিলেন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের ফাঁক ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে সৌদি আরবের কাছে তিনি বোমা বিক্রি করছেন। সিনেটের ডেমোক্রেট সদস্য ক্রিস মার্ফি বলেছেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেবল ফাঁকটি ব্যবহার করছেন। কারণ, তিনি জানেন কংগ্রেস এর অনুমোদন দেবে না। ইয়েমেনে যাতে সৌদি বোমা ফেলতে পারে এবং সেখানে কেবল মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে, সে জন্য নতুন করে 'জরুরি অবস্থার' কারণ সৃষ্টি হয়নি। প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান দলের পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির সদস্য মাইক ম্যাকুল বলেছেন, প্রশাসনের এই কাজ দুর্ভাগ্যজনক এবং এটি সম্ভবত কংগ্রেসের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের ভবিষ্যৎ সম্পর্ককে নষ্ট করছে। সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক-বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ডেমোক্রোট সদস্য রবার্ট মেনেনদেজ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী দেশের পক্ষাবলম্বনের অভিযোগ আনেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'আরও একবার তিনি (ট্রাম্প) আমাদের দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে আর মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলেন।' ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার বর্ষপূর্তির দিনে চুক্তি থেকে আংশিক সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেয় তেহরান। এরপর ইরানের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে উগসাগরীয় এলাকায় বিমানবাহী রণতরী, ক্ষেপণাস্ত্রসহ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের হুমকি মোকাবেলায় ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে 'মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ' শুরুর অভিযোগ এনেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে দেড় হাজার সেনা, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন মোতায়েনেরও ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। ওই ঘোষণার পরই সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে ট্রাম্পের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল। \হএদিকে, শুক্রবার কংগ্রেসকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি চিঠি মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচার পাচ্ছে। ওই চিঠিতে মাইক পম্পেও বলেন, 'ইরানের মারাত্মক কর্মকান্ড'র কারণেই তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্র বিক্রির দরকার। পম্পেও লেখেন, 'ইরানের কর্মকান্ড মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং ভেতরে-বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার ওপর মৌলিক হুমকি সৃষ্টি করেছে। পম্পেও বলেন, উপসাগরীয় এলাকা ও পুরো মধ্যপ্রাচ্যে হঠকারি সিদ্ধান্ত থেকে ইরানকে বিরত রাখতে যত দ্রম্নত সম্ভব এসব অস্ত্র অবশ্যই হস্তান্তর হতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব। ইরান ও সৌদি আরব আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধ ছাড়াও ইরাক ও লেবাননে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থানও বিপরীতমুখী। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরব। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বেসামরিক মানুষের ওপর মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও রিয়াদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা বেশ কয়েকবারই স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প।