তৃণমূলের মহাপতন ঠেকিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থিরাই!

বাম ভোট যদি বিজেপির বাক্সে যেত, তাহলে তৃণমূলের অন্তত ৮ প্রার্থী জিততেন না

প্রকাশ | ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাম ভোট বিজেপিতে গিয়েই পশ্চিমবঙ্গে এবার 'পদ্মের বাগান' সেজে উঠেছে। নিজেদের বিপত্তির জন্য বামপন্থিদের এই 'ভূমিকা'কে দায়ী করছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ভোটের বাস্তব চিত্র বলছে, বাম ভোট পেয়ে গেরুয়া শিবির উপকৃত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মমতার দলও আরও বড় বিড়ম্বনা এড়াতে পেরেছে বামপন্থিদের জন্য! তাদের এলাকায় বামপন্থিরা বিজেপিকে না ঠেকালে তৃণমূলের অন্তত ৮ প্রার্থীর এবার আর লোকসভায় যাওয়া হতো না। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, এএনআই তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে বামফ্রন্টের ভোট এবার ২৬ শতাংশ থেকে কমে ৭.৫২ শতাংশে নেমে এসেছে। বিজেপির ভোট ১০.১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০.২৩ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ইতিহাসে এবারই রাজ্য দেখেছে ভোটের সর্বোচ্চ 'সু্যইং'। শতাংশের হিসাব ধরে বামপন্থিদের ভোট শুধু বিজেপির বাক্সে গিয়ে পড়া নিয়ে চর্চা হচ্ছে। কিন্তু শতাংশের মোড়ক ছাড়িয়ে আসনভিত্তিক হিসাবে ঢুকলে অন্য চিত্রও আছে। যেখানে ধরা পড়েছে, বামপন্থিরা যা ভোট পেয়েছে, তার সব যদি তারা তৃণমূলসহ নানা মহলের অভিযোগ মতো 'পরিকল্পনা মাফিক' বিজেপির বাক্সে চালান হতো, তাহলে গেরুয়া শিবিরের আসন ১৮ থেকে বেড়ে অন্তত ২৬ হতো! বিজেপির পক্ষে 'সু্যইং'য়ের দাপটে আরও উইকেট হারিয়ে তৃণমূলের আসন নেমে আসত ১৪টিতে। মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের আরও উইকেটের পতন বাঁচিয়ে দিয়েছেন বাম প্রার্থীরা। বাম নেতারা বারবারই বলছেন, তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্য সামনে রেখে তাদের ভোটের বিরাট অংশ বিজেপিতে গেছে। কিন্তু প্রার্থীদের জামানাত খোয়ানো, 'জাতীয় দল'র অস্তিত্ব বিপন্ন করার ক্ষতি স্বীকার করে বা 'টাকার বিনিময়ে' দলীয় পর্যায় থেকে বিজেপিকে ভোট হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল- এই তত্ত্ব ভিত্তিহীন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, 'বিজেপি আর তৃণমূল, দুই দলকেই হারানোর ডাক আমরা দিয়েছিলাম।' কিন্তু তৃণমূলকে আগে হারাতে হবে, এই ভাবনা থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয়েছে। যত মাঠ পর্যায়ের ভোটের হিসাব আসবে, ততোই বোঝা যাবে তৃণমূলের অবস্থা কতটা খারাপ। শুধু বামপন্থিদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বাঁচা যাবে কি?' আসন ধরে ভোট বিভাজনের তথ্য জেনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও প্রতিক্রিয়া, 'তার মানে, যেখানে বামপন্থিরা লড়াই করতে পেরেছে, সেখানে তারা আত্মসমর্পণ করেনি। কিন্তু যেখানে তারা খুব দুর্বল, সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।' বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, কালীঘাটে গত শনিবার তৃণমূলের নবনির্বাচিত সংসদীয় দলের সহকারী নেতা হয়েছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সচেতক হয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের তথ্য বলছে, কাকলি-কল্যাণদের লোকসভায় যাওয়া হতো না তাদের আসনে বাম প্রার্থী যথাক্রমে হরিপদ বিশ্বাস ও তীর্থঙ্কর রায় এক লাখ ২৩ হাজার ৭২৩ এবং এক লাখ ৫২ হাজার ২৮১ ভোট ধরে না রাখলে। তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায় আর দিলিস্নতে যেতে পারতেন না, যদি না দমদমে সিপিএম প্রার্থী নেপাল দেব ভট্টাচার্য এক লাখ ৬৭ হাজার ৫৯০ ভোট নিজের বাক্সে জমা রাখতেন।