জাতিসংঘের আহ্বান উপেক্ষা

দামেস্কে উৎসবে ইসরায়েলের বিমান হামলা

সিরিয়ার নাগরিকদের উৎসব পালনের জমায়েতেও বোমা ফেলেছে ইসরায়েল সিরিয়া থেকে বিভিন্ন সমরাস্ত্র সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সিরিয়াকে বাশারমুক্ত করে বিদ্রোহীরা যখন বিজয় উদযাপনে ব্যস্ত, তখন ইসরায়েল গোটা গোলান মালভূমিসহ দক্ষিণ সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ দখল করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান উপেক্ষা করে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সিরিয়ায় হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান। কিন্তু তা উপেক্ষা করে রাত থেকেই হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি ধারাবাহিক বিমান হামলায় ইসরায়েল এরই মধ্যে ধ্বংস করে দিয়েছে সিরিয়ার অধিকাংশ সামরিক কাঠামো। এবার সরাসরি 'টার্গেট' করা হয়েছে রাজধানী দামেস্ককে। গত ৮ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারকে উৎখাত করে সিরিয়ার রাজধানী দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী 'জইশ আল-ইজ্জা'র যৌথবাহিনী। সিরিয়ার ক্ষমতার পালাবদলের পরই নেতানিয়াহু সরকার জানিয়েছিল, 'সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা' প্রতিরোধে একটি 'নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল' (বাফার জোন) গঠন করা হবে। আর তা হবে সিরিয়ার ভূখন্ডে! প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পর গোলান মালভূমি সংলগ্ন 'বিতর্কিত অঞ্চল'-এ যে বাফার জোন তৈরি করা হয়েছিল, তা এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। এর পরে ইসরায়েলি প্যারাট্রুপার এবং সাঁজোয়া বাহিনী 'গ্রাউন্ড অপারেশন' শুরু করেছে। শুক্রবার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দামেস্কের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিরিয়া সেনার চতুর্থ ডিভিশনের সদর দপ্তর ও রেডার স্টেশন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাশারের শাসন থেকে মুক্তির জন্য শুক্রবার রাতে সিরিয়ার নাগরিকদের উৎসব পালনের জমায়েতেও বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এইচটিএস-নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার নতুন সরকার ইসরায়েলি হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি আমেরিকা। তবে সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলি হামলা ও ভূমি দখলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার ও ইরাক। দেশ তিনটি বলেছে, সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ইসরায়েলের এ ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড এ অঞ্চলকে আরও সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে।' সিরিয়ার নতুন সরকারি মুখপাত্র ওবেদা আরনৌত জানিয়েছেন, একটি বিচার বিভাগীয় ও মানবাধিকার কমিটির গড়ে সংবিধান পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় রদবদলের বিষয়টি তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তার আগেই ইসরায়েলি সেনা সিরিয়ার মানচিত্র বদলে দিতে পারে বলে সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন। সিরিয়া থেকে সমরাস্ত্র সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া এদিকে, সিরিয়া থেকে যুদ্ধবিমান ও রণতরী আগেই সরিয়ে নিয়ে গেছে রাশিয়া। এখন বিভিন্ন ঘাঁটিতে মোতায়েন করা অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০সহ অন্যান্য সমরাস্ত্র সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া। শুক্রবার দুটি এএন-১২৪ ভারী রুশ সামরিক পরিবহণ বিমান সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে লাতাকিয়ায় অবস্থিত খেমেইমিম বিমান ঘাঁটিতে দেখা গেছে। এগুলোতে একটি কেএ-৫২ আক্রমণকারী হেলিকপ্টার ও একটি এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বিভিন্ন অংশ খুলে ভরতে দেখা গেছে।' কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস'র একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাইকেল কফম্যান, খেমেইমিম এবং নিকটবর্তী তারতুস নৌ-ঘাঁটি দিয়ে রাশিয়ার সমরাস্ত্র ফেরত নিচ্ছে বলে জানান। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা (এইচইউআর) গত ১০ ডিসেম্বর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়া সিরিয়া থেকে তার বাহিনীকে সরিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কারণ তার একটি সামরিক ঘাঁটি বিদ্রোহীদের হামলার সম্মুখীন হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত ১১ ডিমেস্বর জানান, সিরিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটি এবং কূটনৈতিক মিশন সুরক্ষিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ বজায় রেখেছে। তিনি দেশটিতে রাশিয়ার সেনার সংখ্যা প্রকাশ করতে বা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। রাশিয়া ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্টে বাশার আল-আসাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। দেশটির গৃহযুদ্ধের সময় সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সরকারকে সমর্থন করার জন্য ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের সময় দামেস্ক ক্রেমলিনকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে এর আগে জানা গিয়েছিল, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) রাজনৈতিক পরিষদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানোভের বরাতে এই দাবি করেছে দেশটির বার্তা সংস্থা 'ইন্টারফ্যাক্স'। ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় স্থাপিত রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলো বজায় রাখাই তাদের লক্ষ্য বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বোগদানোভ। তিনি বলেছেন, এইচটিএসের সঙ্গে যোগাযোগের গঠনমূলক অগ্রগতি হচ্ছে। অতিরিক্ত সহিংসতা প্রতিরোধ, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কূটনীতিবিদ ও বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারগুলো তারা রক্ষা করবে বলে ক্রেমলিন প্রত্যাশা করছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া তাদের দুটি সামরিক ঘাঁটি ধরে রাখতে চায়।