আসিয়ানের পরামর্শ

রাখাইনে বন্দিশিবিরে জান্তা বাহিনীর হামলায় নিহত ২৮

মিয়ানমারে নির্বাচনের চেয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা বেশি দরকার

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পশ্চিম রাখাইনে একটি অস্থায়ী বন্দিশিবির এলাকায় শনিবার বিকালে হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৫ জন। জাতিগত সংখ্যালঘুদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এ তথ্য জানিয়েছে। রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণে আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা বাহিনী। এরই মধ্যে রাখাইনের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এএ। ২০২১ সালে অং সান সুচিকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে চলছে এই লড়াই। এর অংশ হিসেবে রাখাইনের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া আরাকান আর্মি। টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি জানিয়েছে, ম্রাউক-ইউ টাউনশিপে একটি বন্দিশিবির এলাকায় বোমা হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। সেখানে জান্তা বাহিনীর পরিবারের সদস্যদেরই বন্দি করে রাখা হচ্ছে। এএ জানিয়েছে, হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীরই পরিবারের সদস্য। তাদেরকে মুক্তির জন্য যখন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল তখন এ ধরনের হামলা চালানো হয় বলেও উলেস্নখ করেছে এএ। নিহতদের মধ্যে নয় শিশু রয়েছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান এদিকে মিয়ানমারে এখন জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় দেশের সংগঠন আসিয়ান। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশে নির্বাচন আয়োজনের বদলে সহিংসতা নিরসনে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে রোববার জান্তা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে তারা। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। চলতি বছর আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছে মালয়েশিয়া। এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান জানিয়েছেন, মিয়ানমারের আকাঙ্‌ক্ষা জানতে আগ্রহী মালয়েশিয়া। আমরা বলেছি, নির্বাচনে এখন অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত নয়। বরং প্রাথমিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যুদ্ধবিরতি। ২০২১ সালে তৎকালীন নির্বাচিত অং-সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। তখন থেকেই দেশটিতে গণতন্ত্রপন্থি ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সরকার। গত কয়েকমাস ধরে বিদ্রোহীদের মধ্যে জোট গঠনের ফলে দেশের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা সরকার।বিভিন্ন ফ্রন্টের যুদ্ধ ও প্রায় বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে এমনিতেই টালমাটাল অবস্থায় আছে সরকার। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে কয়েক ডজন দলকে করা হয়েছে নিষিদ্ধ। এরমধ্যেই চলতি বছর নির্বাচন আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে জান্তা। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিশ্লেষকরা বলেছেন, সামরিক কর্মকর্তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য এটি একটি জালিয়াতি ছাড়া আর কিছু নয়। হাসান আরও বলেছেন, মিয়ানমারে যুদ্ধরত সব পক্ষকে হানাহানি থামানোর আহ্বান জানাচ্ছে আসিয়ান। পাশাপাশি ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জান্তা প্রতিনিধির কাছেও অনুরোধ করা হয়। মিয়ানমার সংকট মোকাবিলায় বিশেষ দূত হিসেবে সাবেক কূটনীতিবিদ ওথমান হাশিমকে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানকার প্রায় দু কোটি মানুষ এখন ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।