ব্রেক্সিট ইসু্যতে ব্যর্থতা

অবশেষে সরে দাঁড়ালেন থেরেসা

ম নতুন দলনেতা নির্বাচন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকছেন ম দলের এমপিরা পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে চার দফায় গোপন ভোট দেবেন ম নতুন নেতাই হবেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯, ১১:০১

যাযাদি ডেস্ক
থেরেসা মে
ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) ইসু্যতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে শুক্রবার অবশেষে নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়িয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ফলে নিয়মানুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদও আর তার থাকছে না। তবে এখনই তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন না। দল নতুন নেতা নির্বাচন না করা পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। জুলাইয়ের শেষের দিকে নতুন নেতা নির্বাচন করা হতে পারে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনসহ ১১ কনজারভেটিভ এমপিকে সম্ভাব্য তালিকায় রাখা হয়েছে। যিনি জিতবেন তিনি আপনা-আপনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও হবেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ব্রেক্সিট নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে না পারার ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন থেরেসা। তখন ৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন জানিয়ে বলেছিলেন, 'যুক্তরাজ্যের স্বার্থে এই বিষয়টি এগিয়ে নেয়ার জন্য একজন নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজনীয়তা এখন আমার কাছে স্পষ্ট।' পদত্যাগের ঘোষণায় থেরেসা বলেছিলেন, তিনি না পারলেও তার উত্তরসূরি হয়তো পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট ইসু্যতে সমঝোতা সৃষ্টি করতে পারবেন। তিনি বলেন, 'এই ধরনের সমঝোতা কেবল তখনই সম্ভব যখন বিতর্করত সব পক্ষ আপস করতে রাজি হবে'। আবেগপূর্ণ ভাষায় থেরেসা তখন আরও বলেছিলেন, 'অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমি আমার কাজ ছেড়ে দেব। কিন্তু যে সম্মান আমি নিয়ে যাচ্ছি, তা সারাজীবন ধরে রাখব। দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, কিন্তু অবশ্যই শেষ নারী প্রধানমন্ত্রী হবো না'। ব্রেক্সিট ইসু্যতে নিজের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, 'কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আমি কিছু করিনি।' ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন থেরেসা মে। গত তিন বছর ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছাড়ার কথা ছিল যুক্তরাজ্যের। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউ'র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে তৈরি হয় ব্রেক্সিট চুক্তি। এই চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও থেরেসা মে তিন দফায় তা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ 'হাউস অব কমন্সে' পাস করাতে ব্যর্থ হন। তবে ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রেক্সিট বিলম্বিত করতে সমর্থ হন তিনি। ব্রেক্সিট ইসু্যতে নিজ দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশাপাশি বিরোধী দলের সদস্যদের রাজি করানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও শেষ পর্যন্ত তাতে সাফল্য পাননি থেরেসা। এ অবস্থায় মে মাসের শেষের দিকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন থেরেসা। নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকলেও ব্রেক্সিট প্রশ্নে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। থেরেসার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে ১১ জন কনজারভেটিভ এমপি থাকলেও সোমবারের মধ্যে কয়েকজন ঝরে পড়তে পারেন। কারণ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। নতুন নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া : টোরি এমপিদের মধ্যে যে কেউ দলীয় প্রধান হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেন, শুধু পার্লামেন্টে আটজন সহকর্মী তাকে সমর্থন দিলেই হবে। তারপর শুরু হবে বাছাই প্রক্রিয়া। এমপিরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেয়ার জন্য আগামী ১৩, ১৮, ১৯ এবং ২০ জুন গোপন ভোট দেবেন। এভাবে বাছাইয়ে বাদ দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত যখন দুইজন থাকবেন তখন দলের সব সদস্য ভোট দিয়ে তাদের একজনকে বেছে নেবেন। আগামী ২২ জুন ওই ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। সদস্যদের ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার চার সপ্তাহ পর নতুন নেতার নাম ঘোষণা করার কথা; যিনি প্রধানমন্ত্রীও হবেন। গত বছর মার্চের হিসাব অনুযায়ী, কনজারভেটিভ পার্টির মোট সদস্য এক লাখ ২৪ হাজার। সর্বশেষ ২০০৫ সালে দলীয় সদস্যদের ভোটে ডেভিড ক্যামেরন দলীয় প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে থেরেসা মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলীয় প্রধান হন।