দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে অব্যবস্থাপনাকে

ভারতে কুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে ১৫ জনের মৃতু্য

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে নিহতদের কয়েকজন -ইন্টারনেট
ভারতের উত্তরপ্রদেশে কুম্ভমেলায় পদদলিতের ঘটনায় অন্তত ১৫ জনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বহু। বুধবার কুম্ভমেলার এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যম এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মৌনী আমবস্যায় 'অমৃত স্নান' করার সময় হুড়োহুড়ির কারণেই এমন বিপত্তি। এতে বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৌনী অমবস্যা উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষের ভিড় হয়েছিল প্রয়াগরাজে। বুধবার ত্রিবেণী সঙ্গমে 'অমৃত স্নান' করতে জড়ো হয়েছিলেন পুণ্যার্থীরা। জানা গেছে, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই পুণ্যার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। হঠাৎ ধাক্কাধাক্কি শুরু হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে আটকে পড়েন অনেকে। দুর্ঘটনার পর পরই উদ্ধার কাজ শুরু হয়। আহতদের উদ্ধার করে মেলা প্রাঙ্গণেরই হাসপাতালে আনা হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেককেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। ত্রিবেণী সঙ্গমে মৌনী অমবস্যায় স্নান করতে দূরদূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেছিলেন মহাকুম্ভে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রয়াগরাজে ভিড় বাড়তে থাকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে মেলা প্রাঙ্গণের অনেক ব্যারিকেড ভেঙে যায়। মঙ্গলবার মাঝরাত থেকেই বহু পুণ্যার্থী ত্রিবেণী সঙ্গমে ভিড় করতে শুরু করেন। রাত ২টা নাগাদ পদদলিতের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। চলছে উদ্ধারকাজ। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি কুম্ভমেলায় আগুন ছড়িয়েছিল। ১৯ নম্বর সেক্টরে গীতা প্রেসের তাঁবু জ্বলে উঠেছিল দাউদাউ করে। সেখান থেকে আশপাশের কিছু তাঁবুতেও আগুন ছড়ায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫০টিরও বেশি তাঁবু। তাঁবুগুলোর ভেতর থেকে পর পর সিলিন্ডার ফাটার শব্দও পাওয়া যাচ্ছিল। ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে (সাবেক এলাহাবাদ) মহাকুম্ভে মহাবিপর্যয় ঘটল। মৌনী অমাবস্যার পুণ্যতিথিতে গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে শাহি স্নানে যাওয়ার পথে প্রবল ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হন অনেক মানুষ। অব্যবস্থাপনায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেলা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ঘাটে স্নান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। সকাল পর্যন্ত সরকারিভাবে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সকালে শুধু বলেন, বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে বেসরকারি মতে, মৃত মানুষের সংখ্যা ১৫। হতাহত ব্যক্তিদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আহত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৩০। কারও কারও মতে আহত হয়েছেন ৭০ জন। এ দুর্ঘটনার পর মেলা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ঘাটে স্নান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। বিভিন্ন আখড়ার সাধুদের জন্য স্নানের নির্ধারিত সময় বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মেলায় বারবার প্রচার করা হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুণ্যার্থীরা যেন সহযোগিতা করেন। মহাকুম্ভ মেলা শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি, চলবে আগামী ২৬ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত। শুরুর প্রথম সপ্তাহেই ১৯ জানুয়ারি মেলা প্রাঙ্গণের বহু তাঁবুতে আগুন লেগেছিল। আড়াই শ তাঁবু পুড়ে গিয়েছিল, যদিও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এবার ঘটল পদপিষ্টের ঘটনা। ঘটনার খবর পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। মহাকুম্ভে প্রধানমন্ত্রীরও যাওয়ার কথা। মঙ্গলবার শেষ সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ছিল মৌনী অমাবস্যার পুণ্যতিথি। এই তিথিতে এবার মকর রাশিতে সূর্য, চাঁদ ও বুধের বিরল উপস্থিতি ঘটছে। সেই সময়ে সঙ্গমে স্নানের অর্থ পুণ্যার্জন। সেই আশায় মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত 'অমৃত স্নান' সারতে লাখো মানুষ উদগ্রীব ছিলেন। ঘাটমুখী সেই জনস্রোত নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কোথা দিয়ে কোথায় যেতে হবে, স্নানের পরইুবা কোথায় ফিরতে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশিকা ছিল না। তাঁরা বলেন, অনেকেই ঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন মাথায় বাক্সপ্যাটরা নিয়ে। একই সময় স্নান সেরে মানুষ ওই পথেই ফিরতে চাইছিলেন। প্রবল ভিড় ও বিপরীতগামী মানুষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে বহু ব্যারিকেড ভেঙে যায়। যাঁরা পড়ে যান, তাঁদের মাড়িয়েই অন্যরা এগোতে থাকেন। আর্তনাদে ভরে যায় চারিদিক। তখন রাত প্রায় তিনটে। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ আগেই জানিয়েছিলেন, মহাকুম্ভে দেশ-বিদেশ থেকে ৪০ কোটি পুণ্যার্থী আসবেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্ধারকারীদের পাশাপাশি র?্যাফ নামানো হয়। মেলা কর্তৃপক্ষ সবাইকে শান্ত থাকার পাশাপাশি সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। সূত্র: এএফপি, এনডিটিভি