সু চিতে আশাভঙ্গ তরুণদের

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাঁচ দশকের সামরিক শাসনের পর বেসামরিক সরকার গঠন করছেন অং সান সু চি। গণতন্ত্রে ফেরার জন্য ব্যাপক আশার সঞ্চার হলো তরুণদের মধ্যে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি হয়েছে সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে। সামরিক বাহিনী এখনো ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় বেশি কিছু করারও থাকছে না সু চি সরকারের। আগের মতোই সরকারের সমালোচকদের জেলে ভরা কিংবা নির্যাতন চলছে মিয়ানমারে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির দল 'ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি'র (এনএলডি) পক্ষে সরগরম প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন মাউং সাউং। কিন্তু বিগত চার বছরে সরকারের কর্মকান্ডে এমন গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন দলের এই একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি বলেন, 'নির্বাচনের পর আমরা অনেক ভালো কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচিত সরকার দেখে মনে হচ্ছে, তারা বুঝতে চাইছে না, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাটা আসলে কী?' ২০১৫ সালে নির্বাচনের আগে জনসম্মুখে সু চির বিরুদ্ধে কথা তেমন শোনা যেতো না। কিন্তু তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার চার বছরের মাথায় সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে অনেকটাই। জনগণ মনে করছে, বেসামরিক সরকারও মানুষকে রক্ষায় কিছু করছে না। পাঁচ দশক ক্ষমতায় থাকা সেনাবাহিনী এখনো ক্ষমতার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। বেসামরিক সরকারও যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি, সেটা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি সাউংয়ের। যিনি এখন ইয়াঙ্গুভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন 'আথান'র পরিচালক। এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মানহানি করার অভিযোগে ২০১৫ থেকে ২০১৬ সময়ে ছয় মাস জেল খেটেছেন তিনি। নিজের মোহভঙ্গের বর্ণনা দিয়ে সাউং বলেন, 'আমি আশা করেছিলাম, বেসামরিক সরকার জনগণকে আগের মতো অযথা বিচারের মুখোমুখি করবে না। কিন্তু তারা সেটাই করলো। হতে পারে, তাদের কাছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভিন্ন সংজ্ঞা আছে। আর আমি মনে করি, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার জনগণের আছে।' গত এপ্রিলে রাজধানী ইয়াঙ্গুনে একটি নাটক পরিবেশনার আয়োজন করে রাজনৈতিক রম্যের দল 'পিকক জেনারেশন'। সেখানে মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী রম্য 'থাংইয়াত' পরিবেশন করে দলটি। ওই নাটকে মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ, বিতর্কিত সংবিধান এবং রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ নিয়ে ব্যঙ্গ পরিবেশন করেন নাট্যকর্মীরা। জনগণ সেই পরিবেশনা উপভোগ করলেও সেনাবাহিনী সেটা মেনে নেয়নি। ওই নাটকের কারণে সাত নাট্যকর্মীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয় এবং তাদেরকে ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেইন কারাগারে বন্দি করা হয়। সেই নাট্যদলের কর্মী শার ইয়ামোন বলেন, 'আমরা যখন পরিবেশনাটি করি, তখন মানুষের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছিলাম। আমরা মানুষেরই কথাই প্রকাশ করছিলাম। বলতে চেয়েছিলাম, মিয়ানমারে আসলে কী হচ্ছে। বর্তমানে বহু অ্যাক্টিভিস্টের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে এনএলডি তাদের ইশতাহার অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।' মিয়ানমারের পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর দখলে। পুলিশ বাহিনীর ওপরও পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের। দেশটিতে বর্তমান সশস্ত্র বিরোধ নিয়ে হতাশ অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা বলছেন, নিজের ভোটারদের দেখভাল করতে ব্যর্থ হয়েছেন সু চি। শার ইয়ামোন বলেন, 'নির্বাচনের আগে সু চি জনগণকে উচ্চকণ্ঠ হতে বলেছিলেন। কিন্তু এখন সরকার বধির, কিছুই শুনছে না।' গত দুই বছর সেনাবাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিক্ষোভ হয়েছে ইয়াঙ্গুনের রাজপথে। সে সময় বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আথান বলছে, কয়েক ডজন অ্যাক্টিভিস্ট এখনো কারাগারে আছেন। সংগঠনটির হিসাবে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিতর্কিত টেলিযোগাযোগ আইনে ১৮৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোতে করা হয়েছে সামরিক বাহিনীতে মানহানির অভিযোগ। ২০১৫ সালে সুন্দর ভবিষ্যতের আশা নিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সু চিকে ক্ষমতায় আনলেও এখন সেই গণতন্ত্র নিয়েই ভয় ধরেছে তরুণদের মনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি জানি, আমার বাবা-মা সু চির কাছ থেকে অনেক পরিবর্তন আশা করেছিলেন। কিন্তু আমরা যেটা আশা করেছিলাম, এখন সেখান থেকে বহুদূরে অবস্থান করছি।' তিনি আরও বলেন, 'সু চি আমাদের বহু আশা দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ; বিশেষ করে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীরা কিছুই পায়নি। তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন ভাবি, আসলে তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য কি-না।' মিয়ানমারে আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সু চিকে নিয়ে দেশবাসীর মোহভঙ্গ হলেও এখনো তিনি তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প। তবে অতীতে তার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জনগণ দিয়ে থাকলেও এখন সেই আস্থা আর নেই। সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে