গাজাবাসীকে সরানোর প্রস্তুতি নিতে ইসরাইলের নির্দেশ

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরাইলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজাবাসী -ইন্টারনেট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এরই মধ্যে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে সরানোর প্রস্তুতি নিতে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যাওয়া নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ফিলিস্তিনের ভূখন্ডটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকচ করে দেওয়ার ঘটনার মধ্যে কাজ বৃহস্পতিবার এ নির্দেশ দিলেন। কাৎজ বলেন, গাজা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে আইডিএফকে আমি নির্দেশ দিয়েছি। গাজাবাসীরা তাদের গ্রহণে রাজি, এমন যেকোনো দেশে তারা চলে যেতে পারেন। তার আরও দাবি, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ের মতো দেশগুলো গাজার যে কোনো বাসিন্দাকে তাদের দেশে গ্রহণ করতে আইনত বাধ্য। এর আগে ৫ ফেব্রম্নয়ারি ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়ে উপত্যকাটি দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়ার ও এটি 'সাগর সৈকতের' অবকাশযাপন কেন্দ্রে পরিণত করার বিস্ময়কর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ট্রাম্প জানান, গাজার বাসিন্দাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পাঠানো হবে ও গাজাকে দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্য ও এর বাইরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এদিকে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও এটিতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, যারা গাজা ছাড়তে চায়, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। এটি গাজার জনগণের একটি বড় অংশকে অন্য দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে। অপরদিকে, এই পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা বলছে, গাজাবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করবে, যা কার্যত জাতিগত নিধনের শামিল হবে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় বসবাসরত ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বেশিরভাগই তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে চাইবে না। তাই এই পরিকল্পনা আদৌ কার্যকর করা সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এটি নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যাপক চাপে ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার বাসিন্দাদের সরানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজার বাসিন্দাদের স্থানান্তর হবে সাময়িক। এমনটি বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, পুনর্গঠনের জন্য গাজা উপত্যকার দখল নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে গাজাবাসীকে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে। প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাব জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাসহ আরব নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমন সময়ে মুখ খুললেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট ট্রাম্পের বক্তব্য আরও স্পষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা করছে না। এদিকে, ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের প্রস্থান ও অভিবাসনের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। তবে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি। গুয়াতেমালা সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব শত্রম্নতাপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি উদার প্রস্তাব, যা ওই অঞ্চলের পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহের চিত্র তুলে ধরে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসিন্দাদের অস্থায়ী সময়ের জন্য গাজা ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে, যাতে ধ্বংসাবশেষ সরানো এবং পুনর্গঠন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। সূত্র: সিএনএন ট্রম্নথ সোশ্যালে ট্রাম্পের মন্তব্য :যুদ্ধের পর ইসরাইলই গাজা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে এদিকে গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্‌ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধের পর ইসরাইলই গাজা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে এবং সেজন্য সেখানে কোনো মার্কিন সেনারও দরকার পড়বে না। "যুদ্ধের সমাপ্তিতে ইসরাইল গাজা ভূখন্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দিয়ে দেবে। ফিলিস্তিনিরা ততক্ষণে দূরে ওই অঞ্চলের নিরাপদ কোনো স্থানে, আরও সুন্দর এলাকায়, নতুন ও অত্যাধুনিক বাড়িতে পুনর্বাসিত হবে," বৃহস্পতিবার ট্রম্নথ সোশ্যালে ট্রাম্প এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে- কয়েকদিন আগে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্য এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সেসবকে পাত্তা না দিয়ে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ফের তার গাজা দখলের পরিকল্পনার কথা জানালেন। আরব দেশগুলো তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত ইউরোপের অনেক দেশও এরই মধ্যে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার প্রথম ট্রাম্প তার গাজা দখলে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান।