উত্তপ্ত তর্কে ট্রাম্প-জেলেনস্কি-জেডি ভ্যান্স

কূটনৈতিক শিষ্টাচার জলাঞ্জলি, স্তব্ধ বিশ্ব

হয়নি খনিজসম্পদ নিয়ে চুক্তি বাতিল যৌথ সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যেকার বৈঠক -ইন্টারনেট
বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কোনোভাবেই তাল মিলাতে পারছেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আর সে কারণে তিনি অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলে জনসম্মুখে বাগবিতন্ডায় জড়ালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। তাদের মধ্যে আলোচনার সময় পরিস্থিতি চিৎকার চেঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। উত্তপ্ত এই বৈঠক বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। তারা অবাক বিস্ময়ে বৈঠক পরিস্থিতি অবলোকন করেন। সাধারণত এ ধরনেকর কোনো রাষ্ট্রীয় বৈঠকে এমন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটে না। তারপরে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে এমন ঘটনা ঘটতে পারে এমন কল্পনাও কেউ করার কথা নয়। অথচ বাস্তবে তাই-ই ঘটল। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে (হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) আয়োজিত বৈঠকে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের খনিজসম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বৈঠকে জেলেনস্কি প্রকাশ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের নরম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। তিনি বলেন, ভস্নাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনোভাবেই আপস হওয়া উচিত নয়। ওদিকে ট্রাম্প বলেন, পুতিন একটি চুক্তি করতে চান। রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে কিছু ছাড় দিতে হবে। জেলেনস্কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন বলেও একপর্যায়ে গর্জে ওঠেন ট্রাম্প। আলোচনার একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, ?আপনি বড় সংকটে রয়েছেন। আপনি এটা (যুদ্ধ) জিততে পারবেন না। একটি চুক্তি করুন, নইলে আমরা বেরিয়ে যাই। এ সময় জেলেনস্কিকে আরও কৃতজ্ঞ হতেও বলেন তিনি। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেলেনস্কিকে 'অভদ্র' বলে বসেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হোয়াইট হাউসের সংবাদদাতারা এ বৈঠককে উত্তেজনার এক নজিরবিহীন মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেছেন। দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতার এমন আচরণে, বিশেষত রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে যাবতীয় কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে জলাঞ্জলি দেওয়ার এই ঘটনায় গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে বলা যায়। বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এভাবে চললে সবকিছু খুব কঠিন হয়ে উঠবে বলে আমার আশঙ্কা। জেলেনস্কিকে তিনি বলেন, কোটি মানুষের জীবন নিয়ে আপনি জুয়া খেলছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। আপনার কাজ এই দেশের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক। রীতিমতো চিৎকার করেই এসব কথা বলেন ট্রাম্প। এ সময় জেলেনস্কি তাকে উচ্চস্বরে কথা না বলার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে জেডি ভ্যান্সের সঙ্গেও বাগবিতন্ডায় জড়ান জেলেনস্কি। জেডি ভ্যান্স বলেন, যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য কূটনীতির দরকার আছে। উত্তরে জেলেনস্কি বলেন, কী ধরনের কূটনীতি? তখন জেলনস্কি ?অভদ্র আচরণ করছেন বলে অভিযোগ করেন ভ্যান্স। যুদ্ধে মার্কিন সহায়তার প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, আমরা ৩৫০ বিলিয়ন বা ৩৫ হাজার কোটি ডলার, সামরিক সহায়তাসহ বহু সহযোগিতা করেছি। আমাদের সামরিক সরঞ্জাম না পেলে এই যুদ্ধ দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেত। চুপ থাকেননি জেলেনস্কিও। জবাবে জেলেনস্কি বলেন, হঁ্যা, এমনকি দুদিনও টিকত না। এমন কথা আমি পুতিনের কাছ থেকেও শুনেছি। এই পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, এভাবে কাজ হয় না। খনিজ সম্পর্কিত চুক্তি না ভেস্তে যায় সেই শঙ্কায় এবার আবার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, দ্বিমত থাকবেই। যখন আপনিই ভুল অবস্থানে আছেন, তখন এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে ঝগড়া করার বদলে চলুন মতবিরোধ মেটানোর চেষ্টা করি। আমরা জানি যে, আপনিই (জেলেনস্কি) ভুল অবস্থানে আছেন। তবে ট্রাম্প চুপ থাকেননি। তিনি বলেন, মার্কিন জনগণের সামনে এটা ঘটাটা আমি ভালো মনে করি। মানুষ মরছে। আপনার সৈন্য নেই। আর আপনি বলছেন, যুদ্ধবিরতি চাই না। আমি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাই। আপনার এখনই যুদ্ধবিরতির ডাক দেওয়া উচিত, যাতে বুলেট ছোড়া বন্ধ হয়, কোনো মানুষের জীবন যেন আর না যায়। আমি যুদ্ধবিরতি চাই। কিন্তু আপনি পরিষ্কারভাবেই যুদ্ধবিরতি চান না। জেলেনস্কি বলেন, আপনার পূর্বসূরিদের প্রশ্ন করুন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তারা কী বলতেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, বাইডেন নামের লোকটা চৌকষ ছিলেন না। দেখুন আমি স্পষ্ট বলতে চাই যে, আমাদের সঙ্গে থাকলে আপনার সুযোগ আছে, আমাদের ছাড়া আপনার হাতে কোনো বিকল্প নেই।