রমজান ও ইহুদিদের বসন্তকালীন উৎসব

মার্কিন প্রস্তাবে যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত ইসরাইল, সাড়া দেয়নি হামাস

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা -ইন্টারনেট
পবিত্র রমজান মাস ও ইহুদিদের বসন্তকালীন উৎসব উপলক্ষে ফিলিস্থিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে ইসরাইল। তবে হামাসের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সাময়িক যুদ্ধবিরতির এ প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটিতে ইসরাইল সম্মত বলে জানিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। শনিবার থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। আর ইহুদিদের বসন্ত উৎসব শুরু হবে আগামী এপ্রিলের ১২ তারিখ থেকে। চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। এই সময়টুকুতে যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল প্রথম ধাপের ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি। শনিবার শেষ হয়েছে এর মেয়াদ। যুক্তরাষ্ট্র চায় এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়ানো হোক। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকেও সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরে মার্কিন প্রস্তাবে সায় থাকার কথা জানানো হয়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব মেনে নিতে সম্মত হয় ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি প্রথম পর্যায়ের সময়সীমা অতিক্রম হওয়ার কয়েকঘণ্টা পর রোবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ কথা জানানো হয়। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের বসন্তকালীন উৎসব উপলক্ষে বিবেচনায় রেখে প্রায় দেড়মাস যুদ্ধবিরতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, উইটকফের প্রস্তাব কার্যকরের প্রথম দিন গাজায় আটক জিম্মির অন্তত অর্ধেককে একবারে ছেড়ে দেওয়া হবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হলে বাকিদের মুক্তি দেওয়া হবে। নেয়ানিয়াহুর কার্যালয় থেকে আরও জানানো হয়েছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বুঝতে পেরেই ওই প্রস্তাব করেছেন উইটকফ। তবে তিনি ইসরাইলের কাছে কখন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন, তা স্পষ্টভাবে উলেস্নখ করা হয়নি। উইটকফের প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ শেষ ও দ্বিতীয় পর্যায় শুরু না হওয়ায় যে কোনও মুহূর্তে হামলা চালানোর সুযোগ ছিল ইসরাইলের। তবে আলোচনার সম্ভাবনা বজায় রাখতে, মুসলিমদের রমজান মাস ও ইহুদীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসবের কথা মাথায় রেখে অন্তত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ধরে রাখার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস সম্মত থাকলে এই প্রস্তাব অনুমোদনে আপত্তি নেই বলে দাবি করেছে ইসরাইল। তবে নেতানিয়াহু কার্যালয়ের বিবৃতির জবাবে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাওয়ি বলেছেন, চুক্তির শর্ত মেনে চলায় তেমন আগ্রহ নেই ইসরাইলের। তিনি প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে বলেছেন, এভাবে শর্ত লঙ্ঘন করতে থাকলে জিম্মিদের ফিরে পাবে না তাদের পরিবার। বরং, এর ফলে কেবল তাদের ভোগান্তি এবং জীবনের হুমকিই বৃদ্ধি পাবে। উলেস্নখ্য, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা চলমান আছে। এই উদ্দেশে আয়োজিত মিসরের রাজধানী কায়রোর সর্বশেষ বৈঠকটি কোনও সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের শর্ত ভাঙা নিয়ে ইসরাইল ও হামাস একাধিকবার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে। যদিও কখনই বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ কেউই উপস্থাপন করতে পারেনি। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতিতে ২৫ জন জীবিত ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি আটজন ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস। অন্যদিকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির ১৬তম দিন থেকে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠাতে বিলম্ব করে ইসরাইল। শেষ পর্যন্ত ইসরাইল গত বৃহস্পতিবার মিসরের কায়রোয় নিজেদের প্রতিনিধিদল পাঠায়। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আল জাজিরাকে জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয় ইসরাইল। তারা প্রথম ধাপেরই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে চায় এবং সেই উদ্দেশ্যেই কায়রোতে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী নয়। তারা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের মূল চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা করতে চায়। \হএদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত জানুয়ারি মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।