উপসাগরে নতুন করে উত্তেজনা

ট্যাঙ্কারে হামলায় ইরান দায়ী :যুক্তরাষ্ট্র

ম অবিস্ফোরিত মাইন অপসারণের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ ম মার্কিন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে তেহরান ম ওমান উপসাগরে মার্কিন রণতরী পাঠানোর ঘোষণা

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাসায়নিকবাহী জাপানি ট্যাঙ্কারে আগুন
ওমান উপসাগরে রাসায়নিকবাহী জাপানি ট্যাঙ্কার থেকে ইরানের বিপস্নবী রক্ষীবাহিনীর অবিস্ফোরিত মাইন অপসারণের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। এর আট ঘণ্টা আগে ওই ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। মার্কিন সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, এটাই প্রমাণ করে, উপসাগরে ট্যাঙ্কারে হামলার সঙ্গে ইরান সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যেই হামলার স্থল ওমান উপসাগরে মার্কিন রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে পেন্টাগন। অবশ্য, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে, ওমান উপসাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাঙ্কারে হামলার ঘটনায় ইরান জড়িত- যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে তেহরান। বৃহস্পতিবারের ওই হামলার সঙ্গে দেশটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি তাদের। এদিকে, বেসামরিক বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স বৃহস্পতিবার ওমান উপসাগরে দুটি ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর একটি ছিল রাসায়নিকবাহী জাপানের মালিকানাধীন 'কোকুকা কোরাজাস'। অপরটি নরওয়ের মালিকানাধীন 'ফ্রন্ট আলটেয়ার'। বিস্ফোরণের পরপর দুটি ট্যাঙ্কার থেকে ক্রুদের উদ্ধার করে ইরান। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। আকাশ থেকে ধারণ করা ঝাপসা সাদাকালো ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কোকুকা কোরাজাস ট্যাঙ্কারের পাশে ছোট্ট একটি সামরিক নৌযান ভেড়ানো রয়েছে। নৌযান থেকে কেউ একজন দাঁড়িয়ে ট্যাঙ্কার থেকে কিছু একটা খুলে নিচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ছোট্ট নৌযানটি ইরানের বিপস্নবী রক্ষীবাহিনীর টহল যান ছিল। ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণের পর যে বস্তুটি তারা খুলে নিয়েছিল, তা ছিল অবিস্ফোরিত লিম্পেট মাইন। 'অবিস্ফোরিত মাইনসহ' ওই জাপানি নৌযানটির আগের ছবিও প্রকাশ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে বলেছেন, 'ওমান উপসাগরে যে হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে মার্কিন সরকারের মূল্যায়ন হচ্ছে- এর জন্য ইরান দায়ী। কোনো বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এভাবে কেউ আক্রমণ করতে পারে না। এ ধরনের হামলা বিশ্ব শান্তিপ্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।' ইরান অবশ্য এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের মিশনের মুখপাত্র আলিরেজা মিরইউসেফি এক টুইটে বলেছেন, 'ইরান দৃঢ়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে।' ইরান সর্বোতভাবে এই হামলার নিন্দা জানায় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এর মধ্যেই, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ খামেনি বলেছেন, তেহরানের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, তার দেশ কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় যাবে না। বৃহস্পতিবার, ইরান সফররত জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে তিনি আরও বলেন, আলোচনায় বসার মতো যোগ্য ব্যক্তি নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ অবস্থায় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের চলমান উত্তেজনা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এ সময়, হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, 'হরমুজ প্রণালীর ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত। বেসামরিক জাহাজে হামলায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। পারস্য উপসাগরে চলমান অস্থিরতা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।' এছাড়াও, জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান আরব দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও। এদিকে, চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ওমান উপসাগরে নতুন করে যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। যদিও, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো দেশের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধ জড়ানোর ইচ্ছে নেই বলে এক বিবৃতিতে জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। ওমান উপসাগরে তেলবাহী ট্যাঙ্কারে হামলার ঘটনায় নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সাড়ে চার শতাংশ বেড়েছে। এ অবস্থায় সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বিশ্বতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। প্রসঙ্গত, গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত উপকূলে কয়েকটি তেলবাহী ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের শিকার ট্যাংকারগুলোর মধ্যে দুটি ছিল সৌদি আরবের মালিকানাধীন। ওই ঘটনার জন্যও ইরানকে দায়ী করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী করলেও আরব আমিরাত তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের দিকে আঙুল তোলেনি।