লাতাকিয়ার পথে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী -ফাইল ছবি
সিরিয়ার একটি উপকূলীয় এলাকায় দেশটির ক্ষমতাচু্যত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুসারীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেশটির বর্তমান শাসকদের অনুগত বাহিনীর তীব্র লড়াইয়ে ব্যাপক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ডিসেম্বরে আসাদকে ক্ষমতাচু্যত করে ইসলামপন্থি একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতায় বসার পর এটাই দেশটিতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে ৭১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। যে দুই বন্দরনগরীতে এই সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে, সেই লাতাকিয়া ও তারতুজে কারফিউ জারি করা হয়েছে। লাতাকিয়ায় একটি নিরাপত্তা অভিযান চালানোর সময় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী অতর্কিতে হামলার সম্মুখীন হলে সংঘর্ষের সূচনা হয়। পরে সেখানে সরকার সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর আরও সেনা পাঠানো হয়; অনলাইনে আসা অনেক ভিডিওতে ওই এলাকায় গুলি বিনিময়ের চিত্র দেখা গেছে। উপকূলীয় এ অঞ্চলটি শিয়া আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র ও আসাদ পরিবারের শক্ত ঘাঁটি।
সংঘর্ষে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। তবে বৃহস্পতিবার সিরিয়াভিত্তিক বার্তা সংস্থা স্টেপের এক খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ার এখনকার সরকারসমর্থিত বাহিনী আসাদসমর্থিত প্রায় ৭১ যোদ্ধাকে হত্যা এবং জাবালেহ ও আশপাশের এলাকা থেকে ২৫ জনের বেশি লোককে আটক করেছে। প্যারিসভিত্তিক আরেকটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সংঘর্ষে মোট ৪৮ জন নিহত হয়েছে,তার মধ্যে ১৬ জন সরকারি বাহিনীর সদস্য, ২৮ জন আসাদপন্থি যোদ্ধা, আর চারজন সাধারণ নাগরিক।
যাচাই করা যায়নি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু ভিডিওতে হোমসের আবাসিক এলাকায় প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
এদিকে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আবদুল গনি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আসাদপন্থি যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। "হাজারো মানুষ অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে, কিন্তু কেউ কেউ এখনো হত্যাকারী ও অপরাধীদের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যেতে চাইছে। সিদ্ধান্ত আপনাদের: অস্ত্র ছেড়ে দিন, নতুবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হোন," বলেছেন তিনি। আলাউইত সদস্যরা বলছেন, আসাদের পতনের পর থেকে তাদের সম্প্রদায় সিরিয়াজুড়ে, বিশেষ করে লাতাকিয়া ও হোমসে ব্যাপক হামলা ও সহিংসতার শিকার হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার অন্তর্বতীকালীন নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য লাতাকিয়া সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটি বড় ধরনের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শারা এখন দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও নতুন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন, সম্প্রতি তার অনুগত বাহিনীর সঙ্গে দ্রম্নজদেরও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
গত ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার ইসলামপন্থি সরকারের সঙ্গে যুক্ত বাহিনীর ওপর এটি সবচেয়ে সহিংস হামলার কয়েকটি। এর বাইরে আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র ও আসাদ পরিবারের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উপকূলীয় অঞ্চলে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, বিশাল সামরিক শক্তি জাবলেহ শহরের দিকে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সিরিয়ার বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সরকার-সমর্থিত বাহিনী জাবলেহ ও এর আশেপাশের এলাকায় আসাদের প্রায় ৭০ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তাছাড়া ২৫ জনেরও বেশি আসাদ সমর্থককে আটক করা হয়েছে।
হোমস ও আলেপ্পো শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যাচাই না করা ভিডিওতে হোমসের আবাসিক রাস্তায় প্রচন্ড গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আব্দুল গনি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে লাতাকিয়ায় লড়াইরত আসাদের অনুগতদের প্রতি একটি সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবার কেউ কেউ খুনি এবং অপরাধীদের রক্ষায় পালিয়ে যাওয়ার ও মৃতু্যর জন্য জোর দিচ্ছে। পছন্দটি স্পষ্ট; আপনার অস্ত্র জমা দিন অথবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হোন।
এ অবস্থায় অন্তর্র্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য এই অঞ্চলটি একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলাউইত সম্প্রদায়ের কর্মীরা জানিয়েছেন, আসাদের পতনের পর থেকে তাদের সম্প্রদায় সহিংসতা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে, হোমস ও লাতাকিয়ার গ্রামীণ এলাকাগুলো। এই সপ্তাহের শুরুতে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে বলেছিলেন, নতুন সরকার আসাদের অধীনে উৎপাদিত অবশিষ্ট যেকোনো মজুত ধ্বংস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সূত্র: বিবিস ও গার্ডিয়ান