অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল

পিছু হটল হংকং সরকার

বিলটি সমাজে ব্যাপক বিভক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে : ল্যাম

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম
আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত 'অপরাধী প্রত্যর্পণ' বিল স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে হংকং সরকার। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম এ ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে গত কয়েকদিনে ব্যাপক বিক্ষোভের পরও ল্যাম বিলটি বাতিলের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ল্যাম বলেন, 'দু'দিন বিষয়টি অধ্যয়নের পর আমি ঘোষণা করছি, আমরা সংশোধনী স্থগিত করব।' তিনি বলেন, 'বিলটি সমাজে ব্যাপক বিভক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।' সংবাদসূত্র : বিবিসি বিলটি 'স্থগিত ও ভাবনার' ব্যাপারে সরকারের প্রতি জনগণের আহ্বান শুনতে পেয়েছেন উলেস্নখ করে ল্যাম বলেন, 'আমাকে স্বীকার করতে হবে ব্যাখ্যা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপার্যপ্ততা ছিল।' চীনপন্থি হংকংয়ের নির্বাহী বলেন, 'আমাদের হংকংয়ের মহান স্বার্থ মনে রাখতে হবে। যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।' বিলটির ব্যাখ্যা ও জনগণকে বোঝাতে তার সরকারের কাজ 'যথেষ্ট' ছিল না বলেও স্বীকার করে নেন এ নারী। ল্যাম বলেন, জুলাইয়ের আগে বিলটি পাসের যে চেষ্টা ছিল, 'সম্ভবত তা এখন আর বিদ্যমান নেই'। বিলটি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের কোনো তারিখও ঠিক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শীর্ষ নির্বাহী। তিনি বলেন, 'কাজের ঘাটতি ও অন্যান্য বিষয়, যা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত।' ল্যামের সংবাদ সম্মেলনের আগে তার এক উপদেষ্টা ও হংকংয়ের বেইজিংপন্থি বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক বিলটি নিয়ে আইন পরিষদে আলোচনা ও ভোটাভুটি 'কিছু সময়ের জন্য' স্থগিত রাখার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছিলেন। বেইজিংপন্থিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় আইন পরিষদে উত্থাপিত হলে বিলটি সহজেই পাস হতো। প্রস্তাবিত ওই বিলে তাইওয়ান, ম্যাকাউ বা চীনের মূল ভূখন্ডে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হংকংয়ের বাসিন্দাদের আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে সে সব স্থানে বহিঃসমর্পণের সুযোগ রাখা হয়েছিল। একে ব্যবহার করে চীন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিকদের ওপর দমনপীড়ন চালাতে পারে বলে আশঙ্কা সমালোচকদের। বেইজিংপন্থি রাজনীতিকদের মতে, বহিঃসমর্পণের সুযোগ না থাকায় হংকং চীনের অন্যান্য অংশের অপরাধীদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন যেন না হয়, সে জন্য প্রতিটি মামলা ধরে ধরে হংকংয়ের আদালতই বহিঃসমর্পণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে- 'রক্ষাকবচ' হিসেবে বিলে এ বিধান যুক্ত আছে বলেও জানিয়েছে তারা। বিরোধীদের আশঙ্কা, বিলটি পাস হলে হংকংয়ের বেইজিংবিরোধী হিসেবে পরিচিতরা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রণাধীন চীনের বিচার ব্যবস্থার জালে আটকা পড়বেন। তাই গত সপ্তাহের রোববার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য, শিক্ষকসহ লাখো বাসিন্দা বিলটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে হংকংজুড়ে বিক্ষোভ দেখায়। গত মঙ্গলবার আইন পরিষদের বাইরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষেও জড়ায়। বিক্ষোভকারীদের সরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়। ল্যাম সে সময় বিলটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখালেও পরে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছে হংকংয়ের সংবাদমাধ্যম 'আইকেবল', 'সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট' ও 'সিং টাও'। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে চীনের কাছে হস্তান্তরের পর হংকংয়ের ইতিহাসে গত সপ্তাহের ওই প্রতিবাদই সবচেয়ে বড় ছিল বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় যুক্তরাজ্য শহরটির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অটুট রাখার প্রতিশ্রম্নতি আদায় করে নিয়েছিল। হংকংয়ের কারণেই চীনকে 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার' নীতিতে চলতে হচ্ছে।