ট্যাংকারে হামলা : ইরানকে হুমকি সৌদি যুবরাজের

'যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় রিয়াদ দ্বিধা করবে না' নাশকতামূলক কূটনীতির আশ্রয় নিয়েছে ওয়াশিংটন :ইরান তেহেরানের সঙ্গে যুদ্ধের ব্যাপারে সাবধান : স্যান্ডার্স

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯, ১০:৫৮

যাযাদি ডেস্ক
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
ওমান উপসাগরে তেলবাহী ট্যাংকারে দ্বিতীয় দফায় হামলার পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ট্যাংকারে হামলার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, রিয়াদের স্বার্থে আঘাত হানলে 'যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় রিয়াদ দ্বিধা করবে না।' সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, পার্স টুডে রোববার প্রকাশিত আরবভিত্তিক দৈনিক 'আশারক আল-আওসাত'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে যুবরাজ বলেন, 'আমরা এই অঞ্চলে যুদ্ধ চাই না। তবে আমাদের জনগণ, আমাদের স্বার্বভৌমত্ব, আমাদের আঞ্চলিক অখন্ডতা এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের ওপর হুমকি এলে তা মোকাবেলায় আমরা দ্বিধা করব না।' তিনি জানান, 'ইরান সরকার তেহরানে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়াকে সম্মান দেখায়নি এবং তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জবাব দুটি ট্যাংকারে হামলার মাধ্যমে দিয়েছে যার একটি জাপানি।' বৃহস্পতিবার ওমান উপসাগরে দুটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর একটি ছিল জাপানের মালিকানাধীন রাসায়নিকবাহী জাহাজ 'কোকুকা কোরাজাস'। অপরটি নরওয়ের মালিকানাধীন ফ্রন্ট আলটেয়ার। আকাশ থেকে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইরানই এই হামলা চালিয়েছে। রাসায়নিকবাহী জাপানি ট্যাংকার থেকে একটি যে সামরিক নৌযান গোপনে অবিস্ফোরিত মাইন অপসারণ করেছে, সেটি ছিল ইরানের বিপস্নবী রক্ষীবাহিনীর। ঘটনার পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইরানকে দায়ী করেন এবং সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্য এতে সমর্থন দেয়। তবে জার্মানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ এবং হামলার শিকার ট্যাংকারগুলোর মালিকরা বলেছেন, এই হামলার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করার মতো কোনো তথ্যপ্রমাণ কারও হাতে নেই। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জাহাজ চলাচল ও তেল সরবরাহের প্রধান পথে ঘটা এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপসাগরীয় অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাত শুরু যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেহরান ও ওয়াশিংটন উভয়েই যুদ্ধ চায় না বলে জানিয়েছে। কিন্তু তাদের এই আশ্বাসে সৌদি আরব ও ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না- এমন নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। এর আগে, ওমান উপসাগরে তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর সর্বশেষ হামলার ঘটনায় 'দ্রম্নত ও চূড়ান্ত' জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ জ্বালানি সরবরাহ ও বাজারের স্থিতিশীলতার ওপর হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এদিকে, ইরান ওই ঘটনায় নিজের জড়িত থাকার অভিযোগ কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের 'অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ' থেকে বিশ্ব জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে 'নাশকতামূলক কূটনীতি'র আশ্রয় নিয়েছে ওয়াশিংটন। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক দ্রম্নত নাজুক হয়ে পড়ে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় জাতির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ইরানের ওপর ফের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তেহেরানের সঙ্গে যুদ্ধের ব্যাপারে সাবধান : স্যান্ডার্স মার্কিন ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স ওমান সাগরে দুটি তেল ট্যাংকারে রহস্যজনক হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করার ব্যাপারে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তেহরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত হিসেবে যেন এই অভিযোগকে ব্যবহার করা না হয়। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, 'ওমান সাগরের ঘটনাকে তেহেরানের সঙ্গে যুদ্ধের অজুহাত হিসেবে অবশ্যই ব্যবহার করা যাবে না। ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়া যে শুধু বেআইনি হবে; তাই নয়, সেই সঙ্গে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, মধ্যপ্রাচ্য ও গোটা বিশ্বে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে।'