অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল

হংকং :এবার ল্যামের পদত্যাগের দাবি

ম স্থগিত নয়, প্রত্যাহার চায় হংকংবাসী

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯, ১১:০৫

যাযাদি ডেস্ক
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম
এবার প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যামের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে কয়েক লাখ হংকংবাসী। একই সঙ্গে বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবি নিয়ে রোববার বিক্ষোভকারীদের অনেকে কালো পোশাক পরে কিংবা হাতে সাদা ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিল শহরের ভিক্টোরিয়া স্কোয়ারে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স শনিবার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন শীর্ষ নির্বাহী ক্যারি ল্যাম। তবে বিক্ষোভকারীদের নেতারা জানিয়েছিলেন, তারা স্থগিত নয়, বরং পুরো বিলের প্রত্যাহার চান। এই দাবিতে রোববার তারা বিক্ষোভ-সমাবেশ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত বুধবারের মতো পুলিশের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে রোববার বিক্ষোভকারীদের অনেকে হাতে ফুল নিয়ে নেমেছিলেন। ভিক্টোরিয়া পার্কে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীদের কারও কারও হাতে থাকা পস্ন্যাকার্ডে লেখা ছিল, 'গুলি করবেন না, আমরা হংকংবাসী'। দুপুরের দিকে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চড়লে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকদের সেখানে ছুটে যেতে দেখা যায়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা সরকারি দপ্তরগুলোর দিকে রওনা দেয়। এ সময় মিছিল থেকে আয়োজকরা ক্যারি ল্যামের পদত্যাদের দাবিতে স্স্নোগান দেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম সংগঠন সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্টের জিমি শাম। বিতর্কিত ওই বিলটিকে 'ছুরি'র সঙ্গেও তুলনা করেছেন তিনি। শাম বলেন, 'এটি প্রায় আমাদের হৃদয়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। সরকার এখন বলছে, তারা এ নিয়ে আর অগ্রসর হবে না, কিন্তু তারা এটিকে সরিয়ে নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই আমরা প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যামের পদত্যাগ দাবি করছি।' মিছিলে অংশ নেয়া ১৬ বছরের ক্যাথিরিন চিয়াং বলেন, 'শনিবার ক্যারি ল্যাম ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য। তিনি হচ্ছেন পুরোপুরি মিথ্যাবাদী ভয়ঙ্কর নেতা। ...আমি মনে করি, তিনি স্রেফ কৌশল অবলম্বনের জন্য বিলটি বিলম্ব করেছেন, যাতে আমরা শান্ত হই।' ক্যাথিরিনের সহপাঠী সিন্ডি ইপ বলেন, 'এ কারণে আমরা এখনো বিলটি বাতিল দাবি করছি। আমরা তাকে আর বিশ্বাস করি না। তাকে পদত্যাগ করতে হবে।' চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত ল্যাম ও তার দলীয় আইনপ্রণেতারা অপরাধী প্রত্যর্পণ আইন পাসের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সম্প্রতি। প্রস্তাবিত বিলটিতে পলাতক অপরাধীদের বিচারের জন্য চীনের কাছে প্রত্যার্পণের বিধান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল চীন নয়, হংকংয়ের বাসিন্দারাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সমালোচকদের দাবি, এই আইনটি চীনকে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের হংকং থেকে বেইজিংয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেবে। এতে যেমন অপরাধীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি হংকংয়ের বিচার ও শাসনব্যবস্থার ওপর চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেবে। তবে, বেইজিংপন্থি রাজনীতিকদের মতে, প্রত্যর্পণের সুযোগ না থাকায় হংকং চীনের অন্যান্য অংশের অপরাধীদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন রুখতে 'রক্ষাকবচ' হিসেবে হংকংয়ের আদালতকেই মামলা ধরে ধরে অপরাধী প্রত্যর্পণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ারও বিলে দেয়া হয়েছে। এরই প্রতিবাদে সর্বশেষ গত বুধবার লক্ষাধিক বিক্ষোভকারী সরকারি ভবনগুলো ঘিরে থাকা সড়কে অবস্থান নেয়। এর ফলে শহরের অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থলটি অচল হয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়েছে কয়েক দফা। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শনিবার ক্যারি ল্যাম বিলটি স্থগিতের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে ল্যাম বলেছেন, 'দুদিন বিষয়টি অধ্যয়নের পর আমি ঘোষণা করছি, আমরা সংশোধনী স্থগিত করেছি।' তিনি বলেন, তার সরকারের প্রতি জনগণের 'বিরতি দাও ও চিন্তা করো' আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রস্তাবিত বিলটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। 'কাজের ঘাটতি ও বিতর্ক সৃষ্টি করা অন্যান্য বিষয়ের জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত' বলেও জানান তিনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটি স্থগিতে হংকংয়ের শীর্ষ নির্বাহীর ঘোষণায় সমর্থন জানায়। এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, হংকং সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান ও সমর্থন জানাচ্ছে চীন সরকার। চীনের এ 'বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল' বিষয়ে বিদেশিদের আগ্রহের ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তিনি। শুয়াং বলেন, 'এটি পুরোপুরিই চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়; এতে অন্য কোনো রাষ্ট্র, সংগঠন বা ব্যক্তির হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না।' ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তর করলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে শহরটির স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রম্নতি আদায় করে নেয়। সাবেক এই ব্রিটিশ কলোনির কারণেই চীনকে 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার' নীতিতে চলতে হচ্ছে।