মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের

ইরানকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত

তেহরান আর যুদ্ধে জড়াতে চায় না :প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ইউরেনিয়াম বিষয়ে ইরানকে সতর্ক করল তিন দেশ

প্রকাশ | ২০ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইরানের যেকোনো আগ্রাসন মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি প্রস্তুত বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গেই তেহরান আর যুদ্ধে জড়াতে চায় না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এরই মধ্যে, তেহরানের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের বিষয়ে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছে চীন। এদিকে, চলমান বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের দাবি জানিয়েছে জার্মানি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত আরও এক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের মধ্যকার সংকট চরমে পৌঁছেছে। ওমান উপসাগরে তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার জেরে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই পারস্য সাগরে মার্কিন সেনা উপস্থিতি পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। তবে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে নয়, বরং দেশটিকে চাপের মধ্যে রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। মঙ্গলবার ফ্লোরিডায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। একই দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের যেকোনো পদক্ষেপ মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত তার দেশ। তিনি বলেন, 'আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই ইরান যখন বারাক ওবামার সঙ্গে সেই ভয়াবহ চুক্তি সই করেছিল, তখন তারা প্রতিনিয়তই যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করার পরিকল্পনার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তা বুঝতে আমি দেরি করিনি। এখন ইরান যাই করুক না কেন, তা মোকাবেলা করতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।' অবশ্য, মধ্যপ্রাচ্যে সেনা মোতায়েন নিয়ে ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি আগেই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে ইরান ওই অঞ্চলের তেল সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতি করতে পারে- এ আশঙ্কায় নিজেকে বিরত রেখেছিলেন। 'টাইম' ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের বক্তব্য থেকে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের তেল রক্ষায় আসলে কী চেয়েছিলেন, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে থেকে বিরত রাখতে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তবে ওয়াশিংটনের আশঙ্কা ছিল, এতে উপসাগরের তেল সরবরাহকে হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে ইরান। সেই চিন্তা থেকে তিনি সেনাশক্তি প্রয়োগ থেকে সরে এসেছিলেন। এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, কোনো দেশের সঙ্গেই যুদ্ধে জড়ানোর উদ্দেশ্য নেই তেহরানের। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। রুহানি আরও বলেন, 'তেহরানের বিজয়ের মধ্য দিয়েই এ সংঘাত নিরসন হবে। কারণ আমাদের বিপক্ষে কোনো রাষ্ট্র লড়াই করছে না। তারা নিছকই গুটি কয়েক রাজনীতিক। বিশ্ব থেকে আমাদেরকে একঘরে করে দেয়ার সব চেষ্টাই তারা করেছে। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়েছেন ওই মার্কিন নেতারা। তাদের কার্যকলাপে পরিষ্কার বোঝা যায়, খুব কম অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন তারা।' যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে চুক্তিভুক্ত বাকি দেশগুলো কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ২৭ জুনের মধ্যে ইউরেনিয়াম উৎপাদনে চুক্তির সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান। তবে সেটি না করার জন্য ইরানকে সতর্ক করেছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। তবে, ইরানকে দমন করতে দেশটির ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করার বিষয়ে সতর্ক করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বেইজিংয়ে সফররত সিরিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এ কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ সময় পরমাণু চুক্তি থেকে তেহরানের সরে যাওয়া উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পরমাণু চুক্তির বিষয়ে তেহরানের প্রতি একই বার্তা দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, 'ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই সমস্যার সমাধান টানতে আমাদের অবশ্যই উদ্যোগী হতে হবে। পরিস্থিতি খুবই সংকটাপন্ন এবং বিশ্ব উদ্বিগ্ন। নিজেদের ক্ষমতার মধ্যে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখবে। তবে এমন পরিস্থিতিতে ইরানের অবশ্যই পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়া উচিত হবে না। অন্যদিকে, পারস্য উপসাগরে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে বিবাদমান সব পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ক্রেমলিন। দেশটির মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার এ আহ্বান জানান।