মার্কিন পরিকল্পনায় 'না' ফিলিস্তিনের

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯, ১৩:১৪

যাযাদি ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার অর্থনৈতিক দিক প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। বাহরাইনে ট্রাম্পের কথিত ওই প্রস্তাব নিয়ে অঞ্চলটির মার্কিনপন্থি দেশগুলোর বৈঠকের দুই দিন আগে শনিবার হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়। তবে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনিরা। এর আগেই কট্টর ইসরাইলপন্থি ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে বাহরাইনে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার মূল ব্যক্তি হচ্ছেন ট্রাম্পের জামাতা ও হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। ইহুদি ধর্মাবলম্বী কুশনারের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাহরাইন সম্মেলনেও সৌদি আরবের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের 'ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি' নামের কথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শনিবার হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে 'ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি'র অর্থনৈতিক দিক প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমাধানের আগে অর্থনৈতিক সমাধান নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক সমাধানের আগে ফিলিস্তিন কোনো অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো চুক্তি নয়। জ্যারেড কুশনার বলেন, 'রাজনৈতিক দিকগুলো দূরে সরিয়ে রাখার জন্য অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। এতে বিতর্ক হবে কম। শান্তিচুক্তিতে উপনীত হতে আমরা চূড়ান্ত চেষ্টা করে দেখি।' ফিলিস্তিনিদের জন্য মৌলিক বিষয় হচ্ছে, তাদের ভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান, বলপূর্বক ভূমি দখল করে তাড়িয়ে দেয়া ফিলিস্তিনিদের ফেরার অধিকার নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো। নিজ ভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্বের শিকার হয়ে বর্তমানে আরব দেশগুলোতে বসবাস করছেন ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি। নিজ দেশে, নিজ ভূখন্ডে ফিরতে আগ্রহী তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় এসব বিষয়ে কোনো কথা না বলে ১৭৯টি অবকাঠামো এবং বাণিজ্যিক প্রকল্পের উলেস্নখ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বলেছেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনের বেকারত্বের হার ৩০ শতাংশ থেকে একক ডিজিটে চলে আসবে। দারিদ্র অর্ধেক কমে যাবে। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নির্বাহী কমিটির সদস্য হানান আশরাওয়ি বলেন, 'প্রথমে গাজা উপত্যকার ওপর থেকে ইসরাইলি অবরোধ তুলে নিতে হবে। ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনিদের ভূমি ও সম্পদ চুরি করছে, তা থামাতে হবে। আমাদের চলাফেরার স্বাধীনতা দিতে হবে। নিজেদের স্থল, নৌ ও আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনিদের দিতে হবে। এরপরই স্বাধীন দেশের নাগরিকরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে অগ্রসর হতে পারেন।' ইলেক্ট্রনিক ইন্তিফাদার সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলি আবুনিমাহ বলেন, মার্কিন পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে কোনো বিনিময় ছাড়াই ফিলিস্তিনকে কিনে নেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গাজা উপত্যকায় হামাসের কর্মকর্তা ইসমাইল রাদওয়ান বলেন, 'অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত সবদিক থেকেই আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি প্রত্যাখ্যান করছি। ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি একটি জাতীয় সংকট। আরা ইসরাইলি দখলদারিত্ব থেকে নিস্তার পেতে চাই। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কোনো বিক্রির বিষয় নয় এবং এটি নিয়ে কোনো দরকষাকষি হতে পারে না। ফিলিস্তিন পবিত্র ভূমি। এখানে দখলদারিত্ব অবসানের কোনো বিকল্প নেই।' ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তি পরিকল্পনা নয়, বরং ফিলিস্তিনিদের জন্য আত্মসমর্পণের দলিল তৈরি করছে। কত টাকা দেয়া হচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করে এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনিরা কখনোই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, এটা শান্তি পরিকল্পনা নয় বরং আত্মসমর্পণের দলিল। কোনো পরিমাণ অর্থ দিয়েই এটাকে গ্রহণযোগ্য করা যাবে না। গত মে মাসে ট্রাম্পের ইসরাইল ঘেঁষা ওই শান্তি পরিকল্পনার ইসরাইলের একটি সরকারপন্থি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এরই মধ্যেই এতে স্বাক্ষর করেছেন। দুই দেশের পক্ষ থেকে এর নাম দেয়া হয়েছে 'ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি' বা শতাব্দীর সেরা চুক্তি।