তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা

ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় সাইবার হামলা

ম সাইবার হামলা নিয়ে ট্রাম্প কোনো মন্তব্য করেননি ম ইরান আজ থেকে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯, ১৩:১৬

যাযাদি ডেস্ক
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ব্যবস্থা
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একেবারে শেষ মুহূর্তে বিমান হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় সাইবার হামলা চালিয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে এ কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের ওই সাইবার হামলা তেহরানের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপককে অকার্যকর করে দিয়েছে বলে 'ওয়াশিংটন পোস্ট'র এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলায় ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনার সত্যিই কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা, তা যাচাই করা যায়নি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স 'আন্তর্জাতিক আকাশসীমায়' থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত ও পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন দেশের তেলের ট্যাংকারে 'ইরানের হামলার' প্রতিক্রিয়ায় সাইবার হামলাটি চালানো হয়েছে বলে আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে 'নিউইয়র্ক টাইমস'। বৃহস্পতিবার গুলি করে ভূপাতিত করা মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল বলে অভিযোগ তেহরানের। তারা পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন দেশের তেলের ট্যাংকারে হামলা চালানোর মার্কিন অভিযোগও অস্বীকার করে আসছে। ওমান উপসাগরে দুটি তেলের ট্যাংকারে হামলার ঘটনার পাল্টায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরানে সাইবার হামলা চালানোর পরিকল্পনা চলছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু গণমাধ্যম। ইরানের ইসলামিক রেভু্যলিশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রই এই সাইবার হামলার লক্ষ্য ছিল। 'ওয়াশিংটন পোস্ট' এবং বার্তা সংস্থা 'এপি' মার্কিন সাইবার হামলায় ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনা অকার্যকর হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনাকে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে রাখা। ইরান যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা চালাতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বলে শনিবার মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ সতর্ক করেছে। ইরান মার্কিন জাহাজ ব্যবস্থাপনা হ্যাক করারও চেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তবে বৃহস্পতিবারের সাইবার হামলা নিয়ে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে ইরান এদিকে, আবারও ইরানের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারির কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ইরান তাদের আচরণ পরিবর্তন না করলে অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত থাকবে। পরে এক টুইটার মন্তব্যে তিনি আজ থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের কথা জানান। ট্রাম্প বলেন, 'আমরা আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছি। কিছু ক্ষেত্রে আমরা খুব দ্রম্নত কাজ করার চেষ্টা করছি।' ট্রাম্প বলেন, 'ইরান যদি একটি উন্নত দেশ হতে চায়, আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে যদি পরমাণু অস্ত্র রাখে, তবে তারা আগামী চার-পাঁচ বছরেও এটা করতে পারবে না। তারা পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হতে পারবে না। আমরা তাদের পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হতে দেব না।' এরপর তিনি ২০১৬ সালে নিজের প্রচারণা স্স্নোগানের মতো করে বলেন, 'লেটস মেক ইরান গ্রেট এগেইন।' ট্রাম্প আরও বলেন, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা বাদ দেয়, তাহলে তিনি হবেন দেশটির শ্রেষ্ঠ বন্ধু। একই সঙ্গে ইরানকে তিনি সম্পদশালী দেশে পরিণত করবেন বলেও উলেস্নখ করেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের পরই এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, সোমবার থেকে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে যাচ্ছে। ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হওয়া থেকে রুখতে এই নিষেধাজ্ঞা দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তেহরান তার গতিপথ না বদলালে অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে গত বছর ওয়াশিংটন নিজেদের সরিয়ে নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। সম্প্রতি ইরান ঘোষণা দেয়, পরমাণু পরীক্ষার ক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত মাত্রার চেয়ে বেশি কাজ করবে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে পরমাণু নিয়ন্ত্রণ-বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। বিনিময় দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু গত বছর ইউরোপীয় মিত্রদের বাধা সত্ত্বেও ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ইরানের ওপর তেল রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।