ওয়াশিংটন- তেহরান উত্তেজনা

ইরানের অবস্থা শোচনীয় হবে :ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলা ব্যর্থ হয়েছে :ইরানি তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
যাযাদি ডেস্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে আবারও হুশিয়ার করে বলেছেন, যুদ্ধ হলে তাদের (ইরানের) এমন অবস্থা হবে, যা কেউ এর আগে কখনো দেখেনি। গত সপ্তাহে ইরান মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এমন হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন তিনি। এদিকে, ইরানি স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলা সফল হয়নি বলে দাবি করেছেন ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ আজারি জাহরমি। সোমবার টুইটারে তিনি এই দাবির কথা জানিয়েছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, পার্স টুডে রোববার মার্কিন সংবাদ মাধ্যম 'এনবিসি নিউজ'র 'মিট দ্য প্রেসে' দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ খামেনিকে সরাসরি কী বার্তা দিতে চান। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না, কিন্তু সামরিকভাবে মুখোমুখি হলে ইরান কোনো সুযোগই পাবে না।' ট্রাম্প তেহরানকে হুশিয়ার করে বলেন, 'আমি কোনো যুদ্ধ চাই না, তবে যদি সেটা হয়, তাহলে এমন কিছু ঘটবে, যা আপনি জীবনে কখনো দেখেননি। কিন্তু আমি সেটা করতে চাই না। কিন্তু আপনি (ইরান) কোনো পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবেন না। আপনি যদি আলোচনা চান তাহলে ভালো। অন্যথায় আপনার আগামী তিন বছরের অর্থনৈতিক অবস্থার শোচনীয় হবে।' আলোচনা নিয়ে ওয়াশিংটনের কোনো পূর্বশর্ত আছে কি-না, ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'না আমি ওটা নিয়ে উদ্বিগ্ন না। কোনো পূর্বশর্ত নেই।' ট্রাম্প আরও জানান, তিনি ইরানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। আর তা না হলে তাদেরকে আগামীতে অনেক বছর অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হবে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আবারও দাবি করেছেন, ওয়াশিংটন ইরানের সঙ্গে 'কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই' আলোচনায় বসতে চায়। তিনি রোববার রাতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শুরু করার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা ইরানের সঙ্গে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসতে প্রস্তুত এবং তারা জানে আমাদেরকে কোথায় পাওয়া যাবে।' এ নিয়ে ট্রাম্প ও পম্পেও গত কয়েক মাসে অসংখ্যবার ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলা ব্যর্থ হয়েছে :ইরানি তথ্যমন্ত্রী এদিকে, সোমবার ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সাইবার হামলা চালিয়েছে, তা ব্যর্থ হয়েছে। টুইটারে মোহাম্মদ জাভেদ আজারি জাহরমি বলেন, 'তারা অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হামলা চালাতে পারেনি। গত বছর আমরা ইরানি ফায়ারওয়াল দিয়ে ৩৩ মিলিয়ন হামলা ঠেকিয়েছি।' আজারি জাহরমি ইরানি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে হামলাকে সাইবার-সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি বলেছেন, ইরানের সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে দেশটি। উলেস্নখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও ইরানের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রার্থনা আর উদযাপনে মেতেছে ইরান অন্যদিকে, মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনা উদযাপন করছে দেশটির মানুষ। উদযাপনের পাশাপাশি এমন সাফল্যের জন্য দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর জন্যও প্রার্থনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যে কর্মকর্তা এটি ভূপাতিতের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার জন্য দোয়া করা হচ্ছে। একজন আলেম বলেন, 'যে কমান্ডার মার্কিন ড্রোনে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন, তার জন্য আমরা বিশেষভাবে দোয়া করছি। যারা তার নির্দেশে এটি ভূপাতিত করেছেন তাদের জন্যও দোয়া করছি।' এ সময় সেখানে সমবেত ব্যক্তিরা উচ্চকণ্ঠে 'আমিন' বলে আওয়াজ তোলেন। এই প্রার্থনামূলক উদযাপন অবশ্য তেহরানের একটি কক্ষেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশজুড়ে চলছে এমন উদযাপন আর প্রার্থনা। এক সময় ইরানের রেভু্যলিউশনারি গার্ডের পলিটিক্যাল বু্যরোর দায়িত্ব পালন করেছেন নাসের ঈমানি। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, 'যাই ঘটুক না কেন, ইরানের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য সেই ৪৮ ঘণ্টা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় সমীকরণ মেলাতে সাহায্য করবে। আপনি যেভাবেই দেখে থাকেন না কেন, ড্রোন ভূপাতিতের ঘটনায় ইরানই জিতেছে।' গত সপ্তাহে ইরান তাদের আকাশসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ড্রোন ভূপাতিত করে। আর এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ট্রাম্প ইরানে হামলার নির্দেশ দেন। পরে অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। ওয়াশিংটন বলছে, তাদের ড্রোনটি পারস্য সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমার ওপর অবস্থান করছিল। ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ছয় জাতির পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছর নিজের দেশকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। যার কারণে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তেই থাকে। এ ছাড়া গত দুই মাসে দুবার মধ্যপ্রাচ্যে তেলের ট্যাংকারে হামলায় ইরান জড়িত বলে ওয়াশিংটনের দাবি এবং মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ এখন চরমে।