ইস্তাম্বুল হাতছাড়া এরদোয়ানের

প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী ইমামোগলু ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নির্বাচনের ফল পছন্দ নয়, তাই নতুন করে ভোটের আয়োজনের জন্য সব রকম কলকাঠি নেড়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান। যে শহর থেকে মেয়র হিসেবে নিজের রাজনৈতিক উত্থান শুরু, সেখানেই ভোটাররা কী করে বিরোধী প্রার্থীকে ভোট দেয়? এত বছর ধরে তিলে তিলে ক্ষমতাকেন্দ্রে প্রায় লাগামহীন আধিপত্য বিস্তার করার পর এই আঘাত বড় কষ্ট দিয়েছিল এরদোয়ানকে। মাত্র তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের আয়োজন করে তাই ভোটারদের 'প্রায়শ্চিত্ত' করার সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে আরেক দফা পরাজয়ের মুখ দেখলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। ভোটাররা আরও বড় ব্যবধানে বিরোধী প্রার্থী ইকরাম ইমামোগলুকে জয়ী করেছে। ফলে হাতছাড়া হলো তার উত্থানের জায়গা ইস্তাম্বুল। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, বিবিসি তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে ২৩ জুন অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে এরদোয়ানের একে পার্টি। প্রায় সব ব্যালট গণনা শেষে দেখা গেছে প্রধান বিরোধীদল 'রিপাবলিকান পিপলস পার্টি'র (সিএইচপি) প্রার্থী ইকরাম ইমামোগলু ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। জয়ের পর ইমামোগলু বলেন, 'আজ এক কোটি ৬০ লাখ বাসিন্দা নতুন করে গণতন্ত্রের প্রতি এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন।' মার্চে অনুষ্ঠিত ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনেও জয় পেয়েছিলেন ইমামোগলু। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ভোটে অনিয়মের অভিযোগ আনার পর ওই নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয় তুরস্কের নির্বাচন কমিশন। ইমামোগলুর প্রতিদ্বন্দ্বী একে পার্টির প্রার্থী তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বিজয়ী ইমামোগলুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেন, 'প্রাথমিক ফলের ভিত্তিতে জয়ী প্রার্থী ইকরাম ইমামোগলুকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আমি।' ইমামোগলুকে অভিনন্দন জানালেও ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনের এই ফলকে এরদোয়ানের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ তিনি একসময় বলেছিলেন, যে ইস্তাম্বুল জয় করে, সে তুরস্ক জয় করে।' তাই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এরপর এরদোয়ানের গদি টলমল করতে পারে। গত ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলগুলো এরদোয়ানের জয়যাত্রা থামাতে পারেনি। তাই ইমামোগলুর এই সাফল্য গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য অভিনন্দন বার্তা পাচ্ছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে তিনি সরাসরি এরদোয়ানের সমালোচনা করেননি। তার বদলে শহরের সমস্যাগুলোর সমাধানের লক্ষ্যে সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন চেয়েছিলেন। বেহিসাবি ব্যয় ও দুর্নীতি দূর করে তিনি আরও স্বচ্ছ এক প্রশাসনের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন। ইস্তাম্বুলে দলের পরাজয়ের ফলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ঘর সামলাতে মন্ত্রিসভায় দ্রম্নত রদবদল করতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। এমনকি ২০২৩ সালের জন্য নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনের তারিখও তিনি এগিয়ে আনতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। ১৬ বছর আগে ক্ষমতায় এসে এরদোয়ান দেশের অর্থনীতিকে বেশ চাঙ্গা করতে পারলেও সাম্প্রতিক সময়ে নানা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংকটের কারণে তুরস্কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন এরদোয়ান। ফলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের মাত্রাও কমছে। সমালোচকদের মতে, ক্ষমতাকেন্দ্রের ওপর নিজের কর্তৃত্ব জোরালো করার প্রক্রিয়ায় বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে কমজোর করে এরদোয়ান গণতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছেন।