মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ইরান

কূটনীতির পথও বন্ধ হয়ে গেল

ইরানের অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না মানসিক সমস্যায় ভুগছে হোয়াইট হাউস : প্রেসিডেন্ট রুহানি

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিষেধাজ্ঞায় সই করে তা দেখাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ খামেনির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে শান্তিপ্রতিষ্ঠার একমাত্র পথটিও ওয়াশিংটন বন্ধ করে দিল বলে মঙ্গলবার অভিযোগ করেছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি টুইটার বার্তায় বলেন, 'ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এবং ইরানের কূটনৈতিক নেতার ওপর অনর্থক নিষেধাজ্ঞা আরোপ কূটনীতির পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কৌশলকে ট্রাম্পের মরিয়া প্রশাসন ধ্বংস করে দিচ্ছে।' এর আগে নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছিলেন, খামেনির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বাস্তব কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বিদেশে এই ধর্মীয় নেতার কোনো সম্পদ নেই। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি সোমবার নজিরবিহীনভাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করার জবাবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই ঘটনার পর তেহরানের ওপর চাপ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সোমবার ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এর প্রতিক্রিয়ায় করা টুইটে ইরানি মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি বলেন, 'ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি) ও কূটনৈতিক কমান্ডারের (জাভেদ জারিফ) ওপর অর্থহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কূটনীতির পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হলো। তিনি বলেন, ট্রাম্পের বেপরোয়া প্রশাসন বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ধ্বংস করছে।' উলেস্নখ্য, খামেনি ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কর্তৃপক্ষ, রাষ্ট্রীয় যেকোনো বিষয়ে তার কথাই শেষ কথা। ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞাটি আরোপ করা হয়েছে, তবে যেকোনো কারণেই হোক এটি আরোপ করা হতোই। ইরান জানিয়েছে, মার্কিন ড্রোনটি তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় আকাশসীমায় প্রবেশ করার পর সেটিকে ভূপাতিত করা হয়। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালির ওপরে আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় থাকার সময় ড্রোনটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে। খামেনির পাশাপাশি ইরানের নৌবাহিনী, এয়ারোস্পেস ও ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) আট জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নতুন এই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ইরানের নেতাদের তাদের আর্থিক উৎসগুলোতে প্রবেশ করতে না দেয়া, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করা আটকানো, অথবা তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পদ থেকে থাকলে সেখানে কার্যক্রম চালাতে না দেয়া। ওয়াশিংটনের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞায় ইরানের শত শত কোটি ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রভাব খুব বেশি হবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ইরান বিষয়ক সাবেক সমন্বয়ক বলেন, 'আমি নিশ্চিত না যে কতগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে যুক্ত আছে। তবে আমার মনে হয় না ইরানের অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে।' মানসিক সমস্যায় ভুগছে হোয়াইট হাউস : প্রেসিডেন্ট রুহানি এদিকে, হোয়াইট হাউস মানসিক সমস্যায় ভুগছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। সোমবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আল খামেনিসহ সেনা-কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। নতুন নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছে তেহরান। টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে হাসান রুহানি বলেন, 'আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলতে চান যে, আপনারা আলোচনায় ইচ্ছুক?' এর আগে ইরান জানিয়েছিল, কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে কূটনৈতিক আলোচনার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।