ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়ছেই

তেহরানের প্রতিক্রিয়ায় বেজায় চটেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, তারা বাস্তবতা বুঝতে পারছেন না উত্তেজনা বিপজ্জনক পরিণতির দিকে এগোচ্ছে : রাশিয়া

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প হাসান রুহানি
মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত এবং তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার জেরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়ছেই। কারণ ইরানের ওপর নতুন মার্কিন অবরোধ আরোপের পর তেহরানের প্রতিক্রিয়ায় বেজায় চটেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের কড়া সমালোচনা করে মঙ্গলবার একাধিক টুইট বার্তায় ইরানের প্রতিক্রিয়াকে অবজ্ঞামূলক ও অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইরানি নেতারা বাস্তবতা বুঝতে পারছেন না। ইরান বলেছে, হোয়াইট হাউস 'মানসিক সমস্যায়' ভুগছে। যদিও তেহরান বলেছে, তারা যুদ্ধ চায় না। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, ডিপিএ এই পরিপ্রেক্ষিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাগ্‌যুদ্ধ যেকোনো সময় সশস্ত্র সংঘাতে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা বেড়ে চলেছে। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে 'নিশ্চিহ্ন' করে দেয়ার হুমকির পর সে দেশের রেভু্যলিউশনারি গার্ড বাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরালি হাজিজাদেহ যেকোনো বিদেশি আগ্রাসন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ ইরানের ভূখন্ডে প্রবেশ করলে তার পরিণাম ভয়াবহ হবে বলেও তিনি সাবধান করে দিয়েছেন। মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ধ্বংস করে এই বাহিনী আগেই এমন মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ইসরাইল সফরকালে ইরানের উদ্দেশ্যে সংলাপের প্রস্তাব গ্রহণ করার ডাক দেন। তার মতে, পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি পুরোপুরি অকেজো করা, দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে মদদ বন্ধ এবং বিশ্বের অন্যখানে বৈরী আচরণ বন্ধ করার বিষয়ে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন। ইরানকে শুধু এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। ইরান অবশ্য জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের এই আলোচনার প্রস্তাব সম্পূর্ণ অর্থহীন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বৈধ যুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। মঙ্গলবার এক টেলিভিশন ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনির ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশে কোনো সম্পদ না থাকায় তার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপে কোনো কাজ হবে না। রুহানি হোয়াইট হাউসের এমন সব নিষেধাজ্ঞাকে 'মানসিক বিকার' হিসেবে বর্ণনা করেন। তার মতে, তেহরান কৌশলগত কারণে ধৈর্য দেখালেও মোটেই ভয় পাচ্ছে না। ইরানের শীর্ষ রাজনীতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন রুহানি। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নির্লজ্জতার পরিচয় দিচ্ছে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি। নতুন নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছে তেহরান। প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, বর্তমানে লেবানন, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সুন্নি-শিয়াসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ ইরানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশ মানেন। তাদের জানা উচিত ছিল, সর্বোচ্চ নেতার সম্পদ বলতে একটি হোসাইনিয়া ও খুব সাদামাটা একটা বসত-বাটি ছাড়া কিছুই নেই। তেহরানের এই প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার একাধিক টুইট করেন ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এসব টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ইরান শুধুমাত্র শক্তি ও ক্ষমতা বোঝে। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কিছুর ওপর ইরানের যেকোনো হামলা বিপুল ও অপ্রতিরোধ্য শক্তির মুখোমুখি হবে। তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য অর্থ হবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া। পূর্ব ঘোষণার ধারাবাহিকতায় সোমবার ইরানের ওপর আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ খামেনির কার্যালয়ও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেন, এই ব্যক্তিরা ওই অঞ্চলের যুদ্ধাবস্থার জন্য দায়ী। নতুন নিষেধাজ্ঞাকে 'কঠোর' আখ্যায়িত করে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন তেহরানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে। এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ইরানকে ঘিরে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। রাশিয়া বলেছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা এই ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা একটি বিপজ্জনক পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে লক্ষ্য করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করে ল্যাভরভ বলেন, বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ২০০৩ সালের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে ইরাকে হামলা চালানোর জন্য একটি অজুহাত খুঁজছিল।