ফের পরমাণু সমঝোতা চুক্তি লঙ্ঘন করল ইরান

তেহরান ৫ শতাংশ পরমাণু সমৃদ্ধ করবে : ঘোষণা দেশটির গতিবিধি পর্যালোচনা করবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দ্বিতীয়বারের মতো পরমাণু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে ইরান। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে পরমাণু সমৃদ্ধকরণের যে মাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল, তা অতিক্রমের ঘোষণা দিয়ে রোববার এ লঙ্ঘন শুরু করেছে দেশটি। ইরানের পরমাণু সমঝোতার মধ্যস্থতাকারী আব্বাস আগাঘচি রোববার জানিয়েছেন, তেহরান ৫ শতাংশ পরমাণু সমৃদ্ধ করবে। চুক্তিতে এর সীমা তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এদিকে, রোববার দেশটির গতিবিধি পর্যালোচনার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে সরে এসে তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আইএইএ সজাগ রয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি আব্বাস আগাঘচি জানিয়েছেন, প্রতি ৬০ দিন অন্তর ইরান সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশ করে বাড়াবে। পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষর করা দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পদক্ষেপ না নিলে তেহরান এ সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখবে। বুশেহর বিদু্যৎকেন্দ্রের জ্বালানি পেতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধের এ মাত্রা বৃদ্ধি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এরই মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার পথ খোলা থাকবে বলেও জানান আগাঘচি। তিনি আরও জানান, চুক্তির লঙ্ঘন না করতে ইরান অনেক বেশি কূটনৈতিক ছাড় দিয়েছে। তবে চুক্তিতে যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ইউরোপীয় সরকারগুলো। গত সপ্তাহে ইরান প্রথম পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রকাশ করে। ওই সময় তারা জানিয়েছিল, চুক্তিতে কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের ৩০০ কেজির যে মাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল, সেটি তারা অতিক্রম করতে শুরু করেছে। ২০১৫ সালের জুনে ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির স্বাক্ষরিত 'জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ পস্ন্যান অব অ্যাকশন' (জেসিপিওএ) চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রম্নতি দেয় তেহরান। কিন্তু পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে 'ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল' আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই ট্রাম্প প্রশাসন তেহরানের ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আর তেল রপ্তানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা এড়াতে উপায় বের করতে চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছিল ইরান। তবে ওই সময়ের মধ্যে দেশগুলো কোনো সমাধান বের করতে পারেনি। তেহরানের নতুন পদক্ষেপ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর চরম উদ্বেগের মধ্যেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, তিনি এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ইরানের পরমাণু প্রশ্নে নতুন আলোচনা শুরুর শর্তগুলো ঠিক করতে একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, পরমাণু ইসু্য নিয়ে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে তেহরানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ বলেন, শুরু থেকেই তার সরকার পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করে এসেছে। তিনি দাবি করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরমাণু সমঝোতা রক্ষা করতে চায় এবং প্যারিস এ লক্ষ্যে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ইউরোপ ইরানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করেন ম্যাখোঁ। এখন থেকে এ লক্ষ্যে আরও বেশি তৎপরতা চালানোর প্রতিশ্রম্নতি দেন তিনি। এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক চাপ, হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান গত ১৪ মাস ধরে কৌশলগত ধৈর্য অবলম্বন করে একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলেছে। কিন্তু এখন সেই ধৈর্যের সীমা শেষ হয়ে এসেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট তার দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞাকে 'সর্বাত্মক অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধ' আখ্যায়িত করে বলেন, এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে নতুন হুমকির জন্ম হতে পারে। তিনি বলেন, ইরান সম্প্রতি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পরমাণু সমঝোতা অনুসরণ করেই নেয়া হয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে এ সমঝোতা রক্ষার লক্ষ্যেই এটা করেছে তেহরান। এ অবস্থায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিশ্রম্নতি পূরণ করে এ সমঝোতা রক্ষার জন্য আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান রুহানি। এদিকে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, তারা ইরানের গতিবিধি পর্যালোচনা করবে। ইরানে থাকা সংস্থাটির পরিদর্শকরা শিগগিরই তাদের পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাঠাবেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা সংস্থার সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।