জীবন্ত আগ্নেয়গিরির নিচে তাদের বসবাস!

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আগ্নেয়গিরির পাদদেশে ফোগো আইল্যান্ড
আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে আটলান্টিকের বুকে একটি দ্বীপপুঞ্জের নাম কেপ ভার্দে। অসংখ্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে ঘেরা এই দেশের দ্বীপগুলো, আর তা থেকে অগ্নু্যৎপাতও হয়ে থাকে নিয়মিত। সম্প্রতি কেপ ভার্দেতে একটি আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা নিঃসরণের পর তা নিচের গ্রামগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। লাভার স্রোত ঢুকে পড়ে বহু লোকের বসার ঘরে পর্যন্ত। তারপরও তারা সেই বাড়িঘর ছেড়ে যেতে চাইছেন না। সাবেক ব্রিটিশ প্যারাঅলিম্পিয়ান অ্যাথলেট এড অ্যাডেপশিয়ান দেখা করতে গিয়েছিলেন কেপ ভার্দের এমনই একজন বাসিন্দার সঙ্গে। আসলে আমি বা আপনি কি একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির পাদদেশে থাকতে রাজি হবো? উত্তরটা নিশ্চয়ই হঁ্যা হবে না। অথচ কেপ ভার্দের অনেক লোকজন কিন্তু ঠিক সেটাই করছেন- আর তাদেরই একজনের বাড়িতে গিয়ে একেবারে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন সাবেক প্যারা-অ্যাথলেট এড অ্যাডেপশিয়ান। রামিরোর বাড়িতে ঢুকেই তিনি দেখেন, ড্রয়িং রুমের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছে জমাট লাভাস্রোত। বিস্ময় চাপতে না পেরে তিনি বলে ওঠেন, এটা কী করে সম্ভব? এ তো অবিশ্বাস্য! দেয়ালে পর্যন্ত ফাটল ধরে গেছে লাভার চাপে। ওই বাড়ির মালিক, ব্যবসায়ী রামিরো কিন্তু বলছিলেন, 'যখন অগ্নু্যৎপাত শুরু হয়, আমরা একেবারেই ভাবিনি যে সেটা এত ভয়ঙ্কর হবে। তবুও আমাদের সৌভাগ্য বলতে হবে আমি ও আমার ছেলে মিলে বাড়িতে যা সব দামী জিনিসপত্র ছিল, তার প্রায় সবই বের করে নিতে পেরেছিলাম।' জমাট লাভা থেকে একটা পাথরের টুকরা হাতে তুলে নিয়ে অ্যাডেপশিয়ান বলতে থাকেন, বিশ্বাস করা যায় এটা একটা আগ্নেয় শিলা? ভাবুন তো, নিজের ড্রয়িং রুমে বসে আপনি টিভিতে ইস্টএন্ডার দেখছেন আর রিল্যাক্স করছেন- এমন সময় হঠাৎ গরম লাভার স্রোত হুড়মুড় করে আপনার ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ল! আমি তো ভেবেই স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি, বিশ্বাসই করতে পারছি না এমন কিছু কখনো ঘটতে পারে। কেপ ভার্দের ফোগো আইল্যান্ডে 'পিকো দো ফোগো' আসলে একটি খুবই সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, আর এই সাংঘাতিক কান্ডটি সেই ঘটিয়েছে। সেটির অগ্নু্যৎপাতে আচমকা ভেসে গেছে নিচের দুটি গ্রাম। তারপরও রামিরো ও তার বন্ধুরা কিছুতেই সেই গ্রাম থেকে সরতে রাজি নন। ওই গ্রামের লাভা বিধ্বস্ত রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে অ্যাডেপশিয়ান তাকে জিজ্ঞেস করেন, মাথার ওপর এত বিশাল একটা আগ্নেয়গিরি থেকে যেকোনো সময় উদ্গীরণের ভয়- সেই আতঙ্ক মাথায় নিয়ে এই গ্রামে কীভাবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন? রামিরো নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দেন, 'আমি আসলে জীবনে দু-দুবার সাংঘাতিক অগ্নু্যৎপাত দেখেছি। দেখেছি কীভাবে গরম ফুটন্ত লাভার স্রোত সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সব কিছু। কিন্তু বিশ্বাস করুন কখনো দেখিনি সেই অগ্নু্যৎপাতে কাউকে মারা যেতে, আর সেটাই আমাকে এখনো এই গ্রামে থেকে যাওয়ার ভরসা জুগিয়েছে, আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ