পানির জন্য দিলিস্নতে হাহাকার চিন্তাহীন বিশেষ শ্রেণি

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
এভাবে প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে
ভারতের রাজধানী দিলিস্নতে দুই কোটি মানুষের বাস। রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী, করপোরেট লবিস্টরা বাস করেন দিলিস্নর কেন্দ্রস্থলে। গোসলখানা, রান্নাঘর কিংবা গাড়ি ধোয়া, বাগান পরিচর্চা ও কুকুরকে গোসল করানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পান তারা। এর জন্য তাদের গুনতে হয় মাসে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মার্কিন ডলার। শহরের মধ্যেই সাধারণ নাগরিকদের বেলায় এই চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো। বিশেষ ব্যক্তিদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি অর্থ দিয়েও পানির জন্য হা-পিত্যেশ করতে হয় তাদের। পাইপ লাইন নয়, বরং তাদেরকে ট্যাংকার থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় দীর্ঘ লাইন ধরে। ভারতে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে পানির সংকট। তবে দিলিস্ন কিংবা দেশের অধিকাংশ স্থানের বিশেষ বা এলিট শ্রেণির মানুষদের পানি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না, ভোগান্তি হয় সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের। পানি সংকটের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পানি সংরক্ষণের বড় ধরনের প্রকল্পের আহ্বান জানিয়েছেন। টেলিকম বিক্রয় প্রতিনিধি অমর নাথ শুক্লা জানান, তিনি দক্ষিণ দিলিস্নতে বাস করেন। সপ্তাহে দুই হাজার লিটারের একটি ট্যাংকারের জন্য তাকে গুনতে হয় ১০ মার্কিন ডলার। এই পানি দিয়ে তিনি নিজে, স্ত্রী, স্কুল-পড়ুয়া তিন সন্তানকে এক সপ্তাহ চলতে হয়। এক বছর আগেও শুক্লা এর চেয়ে কম অর্থ দিয়ে সপ্তাহে দুই ট্যাংকার পানি পেয়েছেন। কিন্তু সরকার পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোয় বাধ্য হয়ে তাকে এখন এক ট্যাংকার দিয়ে চলতে হয়। শুক্লা বলেন, 'ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কেন এত কম পানি, আর দিলিস্নর কেন্দ্রস্থলের জনবিরল এলাকায় কেন এত বেশি সরবরাহ করা হবে?' পানির মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দিলিস্নর সঙ্গম বিহার জেলার ৩০ জনের বেশি বাসিন্দা। ৪৬ বছরের দীলিপ কুমার নাথ বলেন, 'গত বছর পর্যন্ত আমি স্থানীয় কয়েকটি সরবরাহকারীর কাছ থেকে পানি কিনে পান করতাম। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর চিকিৎসক আমাকে বড় ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির বোতলজাত পানি পান করার পরামর্শ দেন।' দিলিস্নর সরকারি কর্মকর্তা অধু্যষিত এলাকা ও ক্যান্টনমেন্টে প্রতিদিন জনপ্রতি ৩৭৫ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। অথচ সঙ্গম বিহার জেলার বাসিন্দারা জনপ্রতি পান মাত্র ৪০ লিটার পানি। তবে এর মধ্যেও আছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের উৎপাত। এরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারি সংস্থার কাছ থেকে পানি চুরি করে অথবা অবৈধ পাম্প স্থাপন করে বেশি দামে পানি সরবরাহ করে। বিশেষ করে তাপমাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় এবং পানির চাহিদা বাড়তে থাকে, এদের দৌরাত্ম্যও তখন বাড়তে থাকে। এর ফলে সরকারি ট্যাংকার যখন পানি সরবরাহ করতে আসে, তখন সংগ্রহকারীদের মধ্যে লড়াই পর্যন্ত বেধে যায়। আর এই সহিংসতার বেশি শিকার হয় পানি নিতে আসা নারী ও শিশুরা। গত বছর দিলিস্নতে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে লড়াই করে অন্তত তিনজন নিহত হয়। ভালসোয়া ডেইরি পুলিশ স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, 'গত মে মাস থেকে পানি নিয়ে লড়াই বেড়ে গেছে এবং আমাদের প্রতিদিন পাওয়া ৫০ শতাংশ অভিযোগই হচ্ছে পানি নিয়ে এই মারামারির।' সংবাদসূত্র : রয়টার্স