মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে বিল অনুমোদন

সম্মতি ছাড়া ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ নয়

তেহরানকে আবারও সাবধান করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা চায় না যুক্তরাজ্য

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ
কংগ্রেসের সম্মতি ছাড়া ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করা যাবে না, শুক্রবার এমন একটি বিল অনুমোদন করেছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ। বিরোধী ডেমোক্রেট ছাড়াও এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের কয়েকজন সদস্যও। এরমধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ সামগ্রিক বিষয়ে আবারও ইরানকে সাবধান করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে, জিব্রাল্টায় তেলবাহী ট্যাংকার আটকের জন্য শিগগিরই যুক্তরাজ্য কড়া জবাব পাবে বলে হুশিয়ার করেছেন ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা। তবে তেহরানের সঙ্গে সংঘাত হবে না উলেস্নখ করে লন্ডন বলেছে, উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা চায় না তারা। অন্যদিকে, ইরানি ট্যাংকার গ্রেস-১ এর আটক চারজন ক্রুকে জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জিব্রাল্টার পুলিশ। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স এদিকে, উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইসু্যতে আবারও ইরানকে সাবধান করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে চলতি মাসে তেহরানকে পঞ্চমবারের মতো সাবধান করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইরান বিপজ্জনক বিষয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে চাইছে। এর পরিণতি ভালো হবে না বলে সতর্ক করেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকির সুরে কথা বললেও, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়ানো তার জন্য আরও একধাপ কঠিন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ এমন একটি বিল অনুমোদন করেছে; যেখানে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের নির্দেশ দিতে পারবেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ওই বিলের পক্ষে ২৫০টি আর বিপক্ষে পড়ে ১৭০টি ভোট পড়ে। যেখানে বিলের সমর্থনে ডেমোক্রেট দলীয় সদস্য ছাড়াও, ২৭ রিপাবলিকান সদস্যও এর পক্ষে ভোট দেন। অবশ্য, বিলে এটাও বলা হয়, ইরান আগ বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালালে, প্রতিরক্ষার স্বার্থে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই এর জবাব দিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা চায় না যুক্তরাজ্য ইরানের জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ কাজেম সিদ্দিকী বলেছেন, 'অবশ্যই আমাদের জনগণের একটা প্রত্যাশা আছে। ব্রিটিশরা আমাদের জাহাজ আটক করেছে। এর চপেটাঘাত এমনভাবে দেয়া হবে, যাতে তারা অনুতপ্ত হয়।' তবে তেলবাহী ট্যাংকার আটক ইসু্যতে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য সংঘাত চায় না বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা নিরসনে কাজ করবে লন্ডন। জেরেমি হান্ট বলেন, 'প্রতিটি মুহূর্তেই পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। আমরা চাই, সমস্যার সমাধান হোক। উত্তেজনা বাড়তে না দেয়ার প্রধান উপায় হলো, মাথা ঠান্ড রাখা। লন্ডন এ বিষয়ে খুবই সতর্ক। আমি ইরানের কাছে পরিষ্কার করতে চাই, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ুক, সেটা কোনো অবস্থাতেই চায় না যুক্তরাজ্য।' উপসাগরে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য ইরানি ট্যাংকার আটক নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই উপসাগরে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে যুক্তরাজ্য। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে 'এইচএমএস ডানকান' নামের যুদ্ধজাহাজটি উপসাগরে পৌঁছবে। এখন যুদ্ধজাহাজটি ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে। এইচএমএস ডানকান টাইপ ৪৫ ডেস্ট্রয়ার। উপসাগরে আগে থেকেই মোতায়েন করা ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস মন্ট্রোজের সঙ্গে কাজ করবে। ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, 'উপসাগরে আমাদের দীর্ঘদিনের উপস্থিতির অংশ হিসেবেই অঞ্চলটিতে এইচএমএস ডানকান মোতায়েন করা হচ্ছে। সাগরপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি ভূমিকা রাখবে। গত বুধবার ওমান ও পারস্য উপসাগরের মাঝামাঝি হরমুজ প্রণালিতে একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার প্রতিহতের চেষ্টা করায় একটি ইরানি নৌকাকে সরিয়ে দেয় রাজকীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইরানি বিপস্নবী বাহিনীর পাঁচটি নৌকা ব্রিটিশ হেরিটেজ ট্যাংকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরে একটি ব্রিটিশ জাহাজ চলে এলে নৌকাগুলো সরে যায়। এর আগে নিজেদের একটি তেল ট্যাংকার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছিল ইরান। তবে, তারা জাহাজ দখলে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এইচএমএস মনট্রোজ নামে ব্রিটিশ রণতরী; যেটি বিপির মালিকানাধীন ট্যাংকারকে নিরাপত্তা দিচ্ছিল, সেটিকে ইরানের তিনটি নৌযান ও একটি জাহাজের মাঝখান দিয়ে চলতে বাধ্য করা হয়। ইরানের এই পদক্ষেপকে তিনি 'আন্তর্জাতিক আইনের অবমাননা' বলে উলেস্নখ করেন।