চীনা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হংকংয়ে

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হংকংয়ে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা
হংকংয়ের রাজপথে শনিবার চীনা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। অঞ্চলটির সীমান্তবর্তী একটি শহরে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা নাগরিকদের চীনে পাঠাতে বিতর্কিত প্রত্যাবাসন বিল নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের সমালোচনা করেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ট্রিবিউন, গার্ডিয়ান শনিবার হংকংয়ের সীমান্তবর্তী শিয়াং শুই শহরে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। চীনের শেনঝেন থেকে শহরটির দূরত্ব খুব বেশি নয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভাকারীরা ছাতা ও হ্যাট ছুড়ে মারলে শক্তিপ্রয়োগ করে পুলিশ। তারা আন্দোলনকারীদের ওপর পেপার স্প্রে (মরিচের গুঁড়া) নিক্ষেপ করে। এর আগে গত ৭ জুলাই চীনা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আন্দোলনকারীরা। চীনবিরোধী এই আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে। পরে লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে বিলটি থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন হংকংয়ের চীনপন্থি শাসক ক্যারি লাম। প্রথমে বিলের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দিলেও পরে আন্দোলনের তীব্রতায় এটি বাতিলের কথা বলেন তিনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক বিবৃতিতে ক্ষমা চান হংকংয়ের বাসিন্দাদের কাছে। এর আগে ওই অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলে কোনো কাটছাঁট করা হবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন ক্যারি লাম। চীন ও তাইওয়ানে অপরাধী প্রত্যর্পণ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে হংকংজুড়ে এই গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে। বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করছে না হংকংয়ের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছে, বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। প্রস্তাবিত বিলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে চীন ও তাইওয়ানে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে। কিন্তু চীন এই আইনের সুবিধা নিয়ে হংকংয়ের বাসিন্দাদের ওপর খবরদারি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা থাকায় বিষয়টি সেখানে রাজনৈতিক ইসু্যতে পরিণত হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০১৮ সালের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিলটি তৈরি করা হয়। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দি বিনিময়ের কোনো চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। কিন্তু এখন তাইওয়ানও জানিয়েছে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা, এটি এমন এক উদাহরণ তৈরি করবে, যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে। এই অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে গত ৯ জুন রাতে অঞ্চলটির রাজপথে নামে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ঢল টানা কয়েক দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। অঞ্চলটির সরকারি অফিসে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে রাখে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। ব্যাপক গণআন্দোলনের তীব্রতায় কর্তৃপক্ষ বিলটির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিলেও হংকংয়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো চীনবিরোধী মনোভাব বিরাজ করছে। শনিবারের বিক্ষোভ তারই প্রমাণ।