খোয়া যায়নি, প্রতিক্রিয়ায় ইরান

ইরানি ড্রোন ধ্বংসের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

তারা নিজেদেরই কোনো ড্রোন ধ্বংস করেছে কিনা, খতিয়ে দেখা উচিত : তেহরান ম গত মাসে অনুপ্রেবেশের দায়ে একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছিল ইরান

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুদ্ধজাহাজ 'ইউএসএস বক্সার'
আরব উপসাগরের হরমুজ প্রণালিতে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ 'ইউএসএস বক্সার' ইরানের একটি ড্রোন 'ধ্বংস করেছে' বলে পেন্টাগন দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই ড্রোনটি মার্কিন নৌযানের এক হাজার গজের মধ্যে উড়ে এসে হুমকি দেয়ায় পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সেটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বলে তারা জানিয়েছে। হরমুজকে ঘিরে ওয়াশিংটন-তেহরান ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই সেখানে এ ড্রোন ভূপাতিতের দাবি উঠল। তবে ইরান দাবি করেছে, তাদের কোনো ড্রোন খোয়া যায়নি। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি হোয়াইট হাউস থেকে এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'ড্রোনটি ইউএসএস বক্সারের এক হাজার গজের মধ্যে উড়ে এসেছিল, সরে যাওয়ার জন্য সেটিকে কয়েকবার বলা হলেও ড্রোনটি তা অবজ্ঞা করে।' তিনি আরও বলেন, 'নিজেদের লোকজন, স্থাপনা ও স্বার্থ রক্ষার অধিকার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তাৎক্ষণিকভাবে তাই ওই ড্রোনটি ধ্বংস করে দেয়া হয়।' যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে ইরানের ধারাবাহিক উসকানির অংশ হিসেবেই দেখছে। এ ছাড়া পেন্টাগন জানিয়েছে, হরমুজ উপকূলে চলাচলের সময় উড়ে আসা একটি ড্রোনের বিরুদ্ধে 'আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা' নিয়েছে ইউএসএস বক্সার। সেখানকার মুখপাত্র কমান্ডার রেবেকা রেবারিচ বলেন, 'আমাদের মূল্যায়ন বলছে, ড্রোনটি ছিল ইরানি।' মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান ও তাদের মিত্রদের ওড়ানো ড্রোনগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ড্রোন দিয়ে ইরাকের ইরান ঘনিষ্ঠ মিলিশিয়ারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন ঘাঁটি ও সেনাবাহিনীর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে বলে অনুমান পেন্টাগনেরও। বৃহস্পতিবার ইউএসএস বক্সারের কাছে উড়ে আসা ড্রোনটিকে 'ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের' মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয় বলে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এর আগে গত মাসে ইরান তাদের আকাশসীমায় 'অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা' একটি মার্কিন ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র সে সময় বলেছিল, তাদের ড্রোনটি ইরানি নয়, আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জিব্রাল্টায় ইরানি একটি তেলবাহী ট্যাংকার আটকের ঘটনায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও তেহরানের সম্পর্কে অবনতি দৃশ্যমান হচ্ছে। সুপার ট্যাংকার 'গ্রেস-১' সিরিয়ার বানিয়াস তেল শোধনাগারের জন্য জ্বালানি নিয়ে যাচ্ছে, এমন সন্দেহে ব্রিটিশ মেরিনের সহায়তায় ও নৌযান এবং এর কার্গোগুলো জব্দ করা হয়। কোনো ড্রোনই খোয়া যায়নি : ইরান এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র হরমুজ প্রণালিতে একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করলেও তেহরান বলছে, তাদের কোনো ড্রোনই খোয়া যায়নি। মার্কিন জাহাজ ভুল করে নিজেদেরই কোনো ড্রোন ধ্বংস করেছে কি-না, ওয়াশিংটনকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে তারা। শুক্রবার ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইরানি ড্রোন ধ্বংসের দাবিকে উড়িয়ে দেন। টুইটারে তিনি বলেন, হরমুজ প্রণালি কিংবা অন্য কোথাও আমরা কোনো ড্রোন হারাইনি। ইউএসএস বক্সার ভুল করে তাদেরই কোনো মনুষ্যবিহীন ড্রোন ধ্বংস করে ফেলেছে কিনা, তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।' শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সেনাবাহিনীও পরে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের সব ড্রোনই ঘাঁটিতে ফিরেছে এবং সবগুলোই অক্ষত। ওয়াশিংটন ড্রোন ভূপাতিতের দাবি করলেও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ তাদের কাছে এখন পর্যন্ত ড্রোন হারানোর কোনো খবর নেই বলে জানিয়েছেন। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে চার বছর আগে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই হরমুজ ঘিরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। ইরানের তেল রপ্তানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ঊর্ধ্বতন ইরানি কর্মকর্তাদের অনেকেই হরমুজ দিয়ে তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ট্যাংকারে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এসব হামলা তেহরানই করাচ্ছে বলে ওয়াশিংটন অভিযোগ করলেও ইরান তা অস্বীকার করে আসছে।