প্রতিক্রিয়া যুক্তরাজ্যের

ট্যাংকার আটক শত্রম্নতামূলক কর্মকান্ড

ম নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে ম ট্যাংকার আটকের ঘটনার ভিডিও প্রকাশ তেহরানের

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আটক ব্রিটিশ ট্যাংকার 'স্টেনা ইমপেরিও'
হরমুজ প্রণালি থেকে ব্রিটিশ পতাকাবাহী ট্যাংকার 'স্টেনা ইমপেরিও' আটকের ঘটনাকে ইরানের 'শত্রম্নতামূলক কর্মকান্ড' হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাজ্য। দেশটি এটাও বলেছে, প্রতিশোধ নিতেই যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে তেহরান। দেশটির মতে, জাহাজ আটকের ব্যাপারে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে 'ইটের বদলে পাটকেল মারার অবস্থা'। পারস্য উপসাগরে দুর্ঘটনায় জড়ানোয় ওই ট্যাংকারটি আটক করা হয়েছে, তেহরানের এমন ভাষ্যও প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। ট্যাংকার আটকের ঘটনায় লন্ডন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূতকে তলবও করেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স এদিকে, শনিবার ইরানের বিপস্নবী রক্ষীবাহিনী উপসাগর থেকে ব্রিটিশ ট্যাংকারটি আটকের ঘটনার একটি ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করেছে। এতে কয়েকটি ইরানি স্পিডবোটের পাশে স্টেনা ইমপেরিওকে চলতে দেখা যায়। ফুটেজে নৌযানটির নামও স্পষ্ট দেখা যায়। ওপরে থাকা একটি হেলিকপ্টার থেকে 'স্কি মাস্ক' পরিহিত সেনাদের ওই ট্যাংকারের ডেক বরাবর বন্দুক ধরে রাখার দৃশ্যও ভিডিওতে ছিল। একই কৌশলে দুই সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ রাজকীয় মেরিন বাহিনীর সদস্যরাও জিব্রাল্টার প্রণালি থেকে ইরানি সুপার ট্যাংকার 'গ্রেস-ওয়ান'কে আটক করেছিল। সিরিয়ার বানিয়াস শোধনাগারে তেল নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে ইরানি ওই ট্যাংকারটিকে আটক করার কথা জানিয়েছিল জিব্রাল্টার। সিরীয় ওই শোধনাগারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা আছে। জিব্রাল্টারে আটক ট্যাংকার ছেড়ে না দিলে 'পাল্টা ব্যবস্থা' নেয়ার হুশিয়ারি ছিল ইরানের। ইরানের বিপস্নবী রক্ষীবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামেজান শরিফ বলেছেন, ট্যাংকার স্টেনা ইমপেরিওর পাহারায় একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজও ছিল। বিপস্নবী রক্ষীবাহিনী ওই যুদ্ধজাহাজের 'প্রতিরোধ ও হস্তক্ষেপ' সত্বেও ট্যাংকার আটকে সক্ষম হয়েছে। যদিও অনলাইনে প্রকাশ করা ভিডিওতে কোনো ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ দেখা যায়নি। উলেস্নখ্য, ব্রিটিশ এ ট্যাংকারটির গন্তব্য ছিল সৌদি আরবের একটি বন্দর; কিন্তু হরমুজ প্রণালি অতিক্রমের সময়ই তার যাত্রাপথ বদলে যায়। শুক্রবার ইরানি সেনারা স্টেনা ইমপেরিওর নিয়ন্ত্রণ নেয়। সংঘর্ষের আগে মাছধরার নৌকাটি ব্রিটিশ ট্যাংকারটিকে সরে যেতে বললেও তারা তাতে গা করেনি। যুক্তরাজ্যের ওই নৌযানটিকে পরে ইরানি সমুদ্রবন্দর বন্দর আব্বাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্গোবিহীন এই নৌযানটির ক্রুরাও সেখানেই অবস্থান করবেন বলে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমোজগান প্রদেশের বন্দর ও সমুদ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বৈশ্বিক তেল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলসীমা হিসেবে পরিচিত হরমুজ প্রণালিতে এই ট্যাংকার আটকের ঘটনা পশ্চিমাদের সঙ্গে তেহরানের উত্তেজনা বৃদ্ধির নতুন নজির হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। গত তিন মাস ধরে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এমনিতেই দেশ দুটিকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে আলোচনায় ট্যাংকার জব্দে 'গভীর হতাশা' ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এদিকে, রোববার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, জাহাজ আটকের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। শুক্রবার ইরান হরমুজ উপকূল থেকে 'মেসদার' নামে আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকারকে আটক করলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়। ওই ট্যাংকারটি আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি 'সোনাত্রাচ'র মালিকানাধীন। এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা এক চিঠিতে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তাদের নৌযানটিকে আটক করার সময় সেটি ওমানের জলসীমায় ছিল, এবং সব নিয়ম মেনেই প্রণালিটি পার হচ্ছিল। চিঠিতে স্টেনা ইমপেরিওর আটককে তেহরানের 'অবৈধ হস্তক্ষেপ' হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছে তারা। যুক্তরাজ্য বলেছে, 'এখনকার উত্তেজনা খুবই উদ্বেগজনক, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে উত্তেজনা নিরসন। আমরা ইরানের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাত চাই না। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি ট্রানজিট করিডর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে বৈধ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের হুমকি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও উসকানিমূলক।' অন্যদিকে, ট্যাংকার আটকের পর এনিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্টের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, 'তারা কী দেখেছে, কী জানে, কী ধরনের প্রতিক্রিয়ার চিন্তা শুরু করেছে, তা নিয়ে কথা বলেছি আমরা। ইরান আজ এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে তারা নিজেরাই নিজেদের নিয়ে গেছে।' এর আগে, পারস্য উপসাগরে টহলরত মার্কিন রণতরী ইউএসএস-বক্সার ইরানের একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে বলে গত বৃহস্পতিবার দাবি করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ইরান ট্রাম্পের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত শুক্রবার মার্কিন দাবি প্রত্যাখ্যান করার পরপরই তেহরানের ব্রিটিশ ট্যাংকার আটক করে। উলেস্নখ্য, তেহরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবারই সৌদি আরবে ৫০০ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। ২০০৩ সালের পর এবারই প্রথম শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে মার্কিন সেনা যাচ্ছে।