কাশ্মীর :৩০০ নেতা-কর্মী আটক চাপ বাড়ছে ভারতের ওপর

জ্জ বিক্ষোভ ঠেকাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযান চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ জ্জ উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া চীনেরও

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক ভারতশাসিত কাশ্মীরের জন্য দেশটির সংবিধানে থাকা বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ওই এলাকায় বিক্ষোভ ঠেকাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযানে কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ রাজনীতিবিদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে আটক করেছে। পুলিশের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দলের নেতা ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ সুবিধা বাতিলের পরিকল্পনায় চলতি সপ্তাহের রোববার থেকেই উপত্যকাটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ করে রাখা হয়; শ্রীনগরে সভা-সমাবেশের ওপরও আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরের এই বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছিল। নতুন এই পদক্ষেপ ১৯৮৯ সাল থেকে ওই এলাকায় উত্থান ঘটা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের প্রভাব কমিয়ে দিলিস্নর শাসন আরও পোক্ত করবে বলে আশা ক্ষমতাসীনদের। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের এসব পদক্ষেপে প্রতিবেশী পাকিস্তান কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা এরই মধ্যে ইসলামাবাদের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও দিলিস্নর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেয়া সিদ্ধান্ত বাতিলের পর থেকে শ্রীনগরের বিভিন্ন সড়কে আধাসামরিক পুলিশের হাজার হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। স্কুলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার সড়কে আছে ব্যারিকেড। এর মধ্যেও বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিবাদ বিক্ষোভের খবর মিলছে বলে জানিয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরিস্থিতির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি তারা। কর্মকর্তাদের একজন বলেন, 'শ্রীনগরের অন্তত ৩০টি স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভ দমাতে পুলিশের প্রতিক্রিয়ায় আহত অন্তত ১৩ জনকে শহরটির প্রধান সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের পুরনো শহরে কয়েক মিটার পরপর দূরত্বে 'রায়ট গিয়ার' নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে দেখা গেছে। কয়েকশ মিটার পরপর ছিল কাঁটাতারের চেকপয়েন্ট।' কাশ্মীরিরা মোদির এই ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিশেষ সুবিধাদি বাতিলের সিদ্ধান্তকে ভারতের অন্য অঞ্চলের লোক ঢুকিয়ে কাশ্মীরের জনমিতি বদলানোর পরিকল্পনা করছেন বলে আশঙ্কা করছেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ৩০০ রাজনীতিককে আটক করা হয়েছে বলে জানান। তাদের অনেকেই কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। কাশ্মীরের প্রভাবশালী দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আইনপ্রণেতাসহ অন্তত ১০০ নেতাকে আটক করা হয়েছে জানালেও সংবাদমাধ্যমের হিসাবে আটক ও ?গৃহবন্দি রাজনীতিকের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। অহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর সম্মিলিত জোট হুররিয়াত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ ওমর ফারুককে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েক ঘণ্টা পর নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে এনে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে তার কার্যালয় জানিয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে দিলিস্নর এসব পদক্ষেপের পর ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি পাকিস্তান কাশ্মীরের সাংবিধানিক সুবিধা প্রত্যাহার করায় ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে সরব হওয়ার কথাও জানিয়েছে। কাশ্মীরের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে জাতিসংঘের মুখপাত্র কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বৈশ্বিক এই সংস্থাটির আগের উদ্বেগও পুনর্ব্যক্ত করেন। মুখপাত্র বলেন, 'আগের প্রতিবেদনে কর্তৃপক্ষ কীভাবে ভিন্নমত দমনে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণকারীদের শাস্তি দিতে নির্বিচারে আটক এবং বিক্ষোভ মোকাবিলায় মাত্রাতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটার বিবরণ আছে।' চলতি সপ্তাহে নতুন যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, তা পরিস্থিতিকে 'নতুন এক মাত্রায়' নিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইসলামিক দেশগুলোর জোট ওআইসিও ভারতের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ সুবিধা বাতিলের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে অবগত করা হয়েছে বলে দিলিস্ন দাবি করলেও বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তাদের এ সম্পর্কে জানানো হয়নি। লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে চীনও। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই ভারতশাসিত কাশ্মীরের লাদাখ অংশের মালিকানা দাবি করে আসছে। চীন তাদের বিবৃতিতে পাক-ভারত বিবাদে না যাওয়ার কথা জানালেও 'চীনের স্বার্থে ঘা লাগলে তা সহ্য করা হবে না' বলে হুশিয়ারি দিয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে, 'ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না। আমরা আশা করবো, অন্য দেশও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করবে না।'