কাশ্মীর সংকট

নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ফল বৈঠক

চীন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বললেও কোনো বিবৃতি দিতে সম্মত হয়নি সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইমরানের সঙ্গে ফোনালাপে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর গুরুত্বের আহ্বান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক -ফাইল ছবি
কাশ্মীর ইসু্যতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক কোনো ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর কাশ্মীর ইসু্যতে শুক্রবার প্রথম বৈঠকে বসে নিরাপত্তা পরিষদ। ভারত জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর চীনের আহ্বানে শুক্রবার ৯০ মিনিটের রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে চীন কাশ্মীর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বললেও নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দিতে সম্মত হয়নি সদস্য রাষ্ট্রগুলো। সংবাদসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। লাদাখ ও কাশ্মীরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে বিল আনা হয়। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতার অভাবে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষেই পাস হয়ে যায় বিলটি। এ ঘটনার পর জাতিসংঘে বৈঠকের আবেদন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি চিঠি দেন নিরাপত্তা পরিষদে। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি জোয়ানা রোনেকাকে এই চিঠি দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালেহা লোদি। পরে কুরেশি সমর্থন আদায়ে চীন সফর করেন। বুধবার চীন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য আহ্বান জানালে শুক্রবার তা অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর ফল জানতে চাওয়া হলে জাতিসংঘের এক কূটনীতিক বলেন, 'বেশি কিছু না।' এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও বিবৃতি দিতে সম্মত হননি। তিনি জানিয়েছেন, 'এই বৈঠকের মাধ্যমে কেউ পাকিস্তানের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব দেখাতে পারে বা এমন কোনো বক্তব্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে; এই আশঙ্কায় বিবৃতি দিতে একমত হয়নি পরিষদের সদস্য দেশগুলো।' ওই কূটনীতিক আরও জানিয়েছেন, 'ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে, এমন ভাষা ব্যবহারে আপত্তি আছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্সের। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে চীন দাবি করে, সংবিধান সংশোধন করে ভারত সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। চীনা কূটনীতিক বলেন, 'এই মুহূর্তে কাশ্মীরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের অবস্থা ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এমন একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বৈধ নয়।' চীনের রাষ্ট্রদূত জুন ঝ্যাং বৈঠকের পর জানান, 'কাশ্মীর ইসু্যতে ভারত ও পাকিস্তানের একতরফা কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা উচিত।' বৈঠকের আগে রাশিয়া জানায়, কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় বিষয়। তবে পাকিস্তানের পক্ষে আছে বলে আশ্বাস দিয়েছিল তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এবং জার্মানি কাশ্মীর নিয়ে বিবৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে বলে, এ ধরনের কোনো বিবৃতি দিতে হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে দেয়াই উচিত। ওই বৈঠকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ভারত বা পাকিস্তান কারোরই উপস্থিত থাকার অনুমতি ছিল না। তবে বৈঠক শেষে নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমে জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিবেদকদের সামনেই জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারত ও পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে কথার লড়াই শুরু হয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালেহা লোদি বলেন, 'বিশ্বের সর্বোচ্চ কূটনীতিক ফোরামে আজ কাশ্মীরিদের কথা, অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষের কথা শোনা হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'বৈঠকের মাধ্যমে নিশ্চিত হলো, এই সমস্যা আন্তর্জাতিক ইসু্য। কাশ্মীর সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ইসলামাবাদ প্রস্তুত।' বৈঠকের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবারুদ্দিন বলেন, 'এটা একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের আন্তর্জাতিক করিৎকর্মাদের প্রয়োজন নেই।' তিনি আরও বলেন, 'ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যায়ক্রমে বিধিনিষেধগুলো শিথিল করা হবে। সাধারণ নাগরিকদের ওপর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও যোগাযোগ জটিলতা ধীরে ধীরে সমাধান করা হবে।' পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, 'ইমরান খানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনে কথা হয়েছে। কাশ্মীর পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের অবস্থা নিয়ে দুই নেতা কথা বলেন। ট্রাম্প-ইমরানের ফোনালাপে কাশ্মীর ইসু্য ছাড়াও আফগানিস্তান পরিস্থিতি, তালেবানের সঙ্গে আলোচনাও স্থান পায়। পরে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা কমাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর গুরুত্বের কথা জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।