অবরুদ্ধ উপত্যকা

ব্যাপক ধরপাকড় চলছে কাশ্মীরে

পুলিশকে লক্ষ্য করে যেসব এলাকায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ সেখানেই অভিযান ভারতে ঢুকেছে চার জঙ্গি সীমান্তে সতর্কতা জারি

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জম্মু-কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল
যাদি ডেস্ক বিধিনিষেধ শিথিল হলেও ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড় অব্যাহত আছে। কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শহর শ্রীনগরে সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে নিরাপত্তা বাহিনী আটক করেছে বলে মঙ্গলবার স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক দিনে যেসব স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর নিক্ষেপের তীব্রতা বেড়েছে; সেসব স্থানেই অভিযান চালানো হয়েছে। ওই কর্মকর্তা অবশ্য নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ঘোষণা করে বিজেপি সরকার। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা স্থগিত করা হয় সেখানে। এছাড়া কারফিউ জারি করা হয় অধিকাংশ স্থানে। অবশ্য সোমবার থেকে কাশ্মীরের স্কুলগুলো খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফোন ও ইন্টারনেট সেবায় নিয়ন্ত্রণ এবং জনসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কাশ্মীরে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। শ্রীনগরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ছে বিক্ষোভকারী তরুণরা। যেসব স্থানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে, সেখানেই অভিযান চালিয়ে লোকজনকে আটক করা হচ্ছে বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, 'গত কয়েকদিনে যেসব এলাকায় পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা বেশি ঘটেছে, সেসব এলাকা থেকে এদের আটক করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত ঠিক কত সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, আটকের সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই চার হাজারের কম নয়। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, উপত্যকার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানকার কারাগারগুলোতে আর বন্দি ধারনের মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই। ফলে ভারতের অন্যান্য স্থানের কারাগারগুলোতে পাঠানো হচ্ছে ধরপাকড়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের। কাশ্মীরের রাজনীতিক শেহলা রশিদ টুইট করে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা রাতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, 'তারা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করছে, খাবার ফেলে দিচ্ছে বা চালের বস্তায় তেল ঢেলে দিচ্ছে এবং শেষে বাড়ির তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে।' তিনি লিখেছেন, সোপিয়ানের একটি সেনা ক্যাম্পে চারজন তরুণকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেরা ও নির্যাতনের সময় তাদের সামনে মাইক্রোফোন ধরে রাখা হয়েছিল- যাতে তাদের চিৎকারের আওয়াজ শুনে গোটা এলাকা ভয় পায়। তবে সোপিয়ানের সেনা ক্যাম্পে কাশ্মীরি যুবকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তার অডিও মহলস্নায় শোনানো হয়েছে বলে শেহলা রশিদের দাবিকে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে 'ভুয়া সংবাদ' বলে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শেহলা রশিদের এসব অভিযোগকে মিথ্যা রটনা বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছেন অলক শ্রীবাস্তব নামে এক আইনজীবী। তিনি প্রশ্ন তুলছেন, 'ওই সব কথিত নির্যাতনের অডিও বা ভিডিও কোথায়? কিংবা নির্যাতিতদের নাম, পরিচয় বা ঘটনা কোথায় ঘটেছে, সেগুলোই বা কেন তিনি জানাতে পারছেন না?' ভারতে ঢুকে পড়েছে ৪ জঙ্গি সীমান্তে সতর্কতা জারি এদিকে, ভারতের মধ্যপ্রদেশে ঢুকে পড়েছে চার জঙ্গি। গুজরাট হয়ে তারা ভারতে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ। ফলে নাশকতার আশঙ্কায় এরই মধ্যেই হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে গুজরাটে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সীমান্ত। সীমান্তজুড়ে তলস্নাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এমনকি সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরই মধ্যপ্রদেশ-গুজরাট সীমান্তে অবস্থিত খাংগেলা চেকপোস্টে প্রত্যেক গাড়িতে তলস্নাশি চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ এবং স্টেট রিজার্ভ পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। ঝাবুয়া জেলার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় চলছে ব্যাপক তলস্নাশি। আফগান জঙ্গিদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে গুজরাট পুলিশ। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের স্কেচও প্রকাশ করা হয়েছে। জঙ্গিরা আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকেই জঙ্গিরা দেশটিতে ঢোকার চেষ্টা করছে।