কাশ্মীর সংকট

ভারতের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি নন ইমরান

শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছি, তারা একে দুর্বলতা মনে করেছে :ইমরান জ্জ উত্তেজনা না বাড়াতে পাক-ভারতের প্রতি ফ্রান্সের আহ্বান

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
কাশ্মীর ইসু্যতে ফের ভারতের কড়া সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। 'নিউইয়র্ক টাইমস'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বুধবার তিনি বলেন, 'ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আর কোনো সংলাপে যেতে আগ্রহী নন তিনি। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে দুই দেশকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ওই প্রস্তাবের পরেই আলোচনায় অনাগ্রহের কথা জানালেন ইমরান। এতে করে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। সংবাদসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, ইনডিয়া টুডে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত-পাকিস্তানের তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটিই হয়েছে কাশ্মীর ইসু্যতে। গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর প্রতিবাদে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করাসহ ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কার করে পাকিস্তান। দুই দেশের সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে চলছে টানটান উত্তেজনা। একইসঙ্গে সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি স্থগিত ও ভারতের স্বাধীনতা দিবসকে 'কালো দিবস' হিসেবে পালন করেছে পাকিস্তান। ইমরান খান বলেন, 'ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ৫ আগস্টের আগে ও পরে বারবার যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, 'তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো মানে নেই। আমি অনেক কথা বলেছি। এখন আমি পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছি, আর তারা একে দুর্বলতা বলে মনে করেছে। আমাদের এর বেশি আর কিছু করার নেই।' কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ায় এর আগেও বারবার ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের সমালোচনা করেছেন ইমরান খান। সাম্প্রতিক এই মন্তব্য নিয়ে দিলিস্নর পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি এখনো। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'কাশ্মীরে সরকারি অফিস, ব্যাংক ও হাসপাতাল স্বাভাবিকভাবেই চলছে। পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে।' ভারতের বর্তমান সরকারকে ইমরান খান ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের দাবি, বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলে গণহত্যা হতে পারে। কাশ্মীরের অচলাবস্থা শুরুর পর প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইমরান খান। তিনি বলেন, ৮০ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, সেখানে জাতিগত নিধন এবং গণহত্যা সংঘটিত হতে পারে। তবে, এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। কাশ্মীর ইসু্যকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে আখ্যা দিয়েছে তারা। কর্তৃপক্ষ জানায়, সেনা মোতায়েনের ব্যাপারটি সাময়িক ও জরুরি। ইমরান খান বলেন, কাশ্মীরে ভারত কোনো ভুল অভিযান চালাতে পারে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, তখন ইসলামবাদও জবাব দিতে বাধ্য হবে। তিনি আরও বলেন, 'পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ যখন চোখে চোখ রেখে যুদ্ধের হুশিয়ারি দেয়, তখন যেকোনো কিছুই হতে পারে। বিশ্বশান্তির জন্য যা ভালো কিছু নয়।' এর একদিন আগেই ফোনে ট্রাম্পকে সামগ্রিক পরিস্থিতি জানিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একই ইসু্যতে ট্রাম্পকে ফোন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের পর সোমবার টুইটারে দেয়া এক পোস্টে তিনি কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থাকে 'একটি কঠিন পরিস্থিতি' হিসেবে উলেস্নখ করেন। পরদিন মঙ্গলবার অঞ্চলটির বিদ্যমান অবস্থাকে 'উত্তেজনাপূর্ণ' হিসেবে উলেস্নখ করেন ট্রাম্প। উত্তেজনা না বাড়াতে ফ্রান্সের আহ্বান এদিকে, কাশ্মীর সংকট ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ইসু্য বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ সমাধান এবং উত্তেজনা বাড়ায় এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কাশ্মীর ইসু্যতে বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ্য-ইয়েভেস লে ড্রায়ানের ফোনালাপে এই অবস্থানের কথা জানায় প্যারিস। ফোনালাপে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। কাশ্মীরকে ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ইসু্য উলেস্নখ করে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান। এ ছাড়া পরিস্থিতি আরও নাজুক না করতে উত্তেজনা পরিহার করার আহ্বানও জানিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।