দ্বিখন্ডিত কাশ্মীর

অন্য রাজ্যগুলোর জন্যও সতর্ক সংকেত

বিশ্লেষণ

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জম্মু-কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেকে 'ফেডারেলিজম'র একজন উৎসাহদাতা হিসেবে চিত্রিত করতে পছন্দ করেন; যিনি কিনা রাজ্যগুলোকে আরও স্বাধীনতা দেয়ায় বিশ্বাস করেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও রাজ্যকে ভেঙে দুই ভাগ করা এবং যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলায় অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বড় ধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ এখন সরাসরি দিলিস্নর শাসনে থাকবে। এগুলো অন্য রাজ্যের তুলনায় কমই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পাবে। 'লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকস'র অধ্যাপক সুমান্ত্রা বোস ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির এই উদ্যোগকে বলছেন, দিলিস্নর 'গৌরবময় মিউনিসিপালিটি'। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা ছিল একটি সাংবিধানিক নিশ্চয়তা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটা আসলে প্রতীকী। কারণ, প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের অনেক কিছু আগেই কেড়ে নেয়া হয়েছে। যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো অনেকেই বলে থাকেন যে, এটা একটা চেতনা, যা ভারতীয় সংবিধানে যে মূলধারা থেকে আলাদা যারা আছে বলে মনে করেন, তাদের জন্য একটু জায়গা করে দেয়। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সত্যিকার অর্থে অনেক কষ্টে অর্জিত। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মতো উন্নত দেশে যত সহজে ক্ষমতার ভাগাভাগিকে সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের মাধ্যমে করা হয়েছে, ভারতের মতো একটি গরিব দেশে সেটা ততো সহজ নয়। দিলিস্নভিত্তিক থিংক ট্যাংক 'সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ'র প্রধান নির্বাহী ইয়ামিনি আইয়ার বলছেন, সংবিধান একক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে একটি ভারসাম্য নিশ্চিত করেছে। যদিও বিশ্লেষকরা অনেকেই ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। সাংবিধানিক পদ্ধতি যেখানে কাজ করে না। ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্তরা রাজ্য গভর্নর হিসেবে কাজ করেন। এ ধরনের সরাসরি শাসন ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অন্তত ৮৮ বার হয়েছে। অনেকে মনে করেন, কেন্দ্রের শাসনে থাকা অবস্থায় স্থানীয় জনগণ ও রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যেভাবে ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে, সেটি ভারতের ফেডারেল রেকর্ডে আরেকটি দাগ। 'ডিমিস্টিফাইং কাশ্মীর' গ্রন্থের লেখক নভনিতা চাদা বেহেরা বলছেন, 'এ ধরনের পদক্ষেপের বড় তাৎপর্য হলো, আমরা একক রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি এবং গণতান্ত্রিক নীতির বিলুপ্তি, যা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করছে।' তিনি বলেন, বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এটি হতে পারে অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে বাতিল করে দিতে পারে। রাজ্যকে ভাগ করতে পারে ও মর্যাদাহানি ঘটাতে পারে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া ও আঞ্চলিক দলগুলোর চুপ থাকার মাধ্যমে প্রতিবাদকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া। মোদি সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপে যাদের সমর্থন রয়েছে, তারা বলছেন- কাশ্মীর একটি বিশেষ ঘটনা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সশস্ত্র একটি অঞ্চল; যেটি ভারতের পারমাণবিক প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের কাছেই, সে জন্য আর কিছু করার ছিল না। নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অনেক বছর ধরেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবি করে আসছে, তাদের কাছে এই অনুচ্ছেদ দেশটির একমাত্র মুসলমান অধু্যষিত রাজ্যকে খুশি করার একটি উদাহরণ। যদিও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ইতিহাসও ভারতের আছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আর কোথায় এমন উদাহরণ আছে যে, যিনি স্বাধীনতার জন্য ২৫ বছর গেরিলা যুদ্ধ করে পরে সেই রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন? ১৯৮৬ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল। বিদ্রোহী নেতা লালদেংগা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। অন্তর্ভুক্তি আর ক্ষমতা ভাগ করাই ভারতীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে, দেশকে আরও শক্তিশালী করেছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টেরও এ বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য আছে। ড. বেহেরা বলছেন, 'এখন এটা চমৎকার দেখার বিষয় হবে যে, কাশ্মীরের বিষয়ে আইনি যে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে আদালতে, সেটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী করে। তিনি বলেন, এটা সর্বোচ্চ আদালতের স্বাধীনতার জন্যও একটি টেস্ট কেস। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ