অবরুদ্ধ কাশ্মীর

নজিরবিহীন নজরে গণবিক্ষোভ পন্ড

গণবিক্ষোভ ঠেকাতে উপত্যকাকে অবরুদ্ধ করে রাখে নিরাপত্তা বাহিনী জম্মু-কাশ্মীরে গণহত্যার আশঙ্কা মানবাধিকার সংস্থার

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে নিরাপত্তার কড়াকড়ি কয়েকগুণ বৃদ্ধি ও কঠোর নহজরদারিতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রতিবাদে স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের ডাকা গণবিক্ষোভ পন্ড হয়ে গেছে। শ্রীনগরে জাতিসংঘের দপ্তর অভিমুখে এ বিক্ষোভের ঘোষণার পর তা ঠেকাতে উপত্যকাটিকে বৃহস্পতিবার থেকেই নজিরবিহীন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। কিছু জায়গায় রাস্তায় ব্যারিকেডও দেয় তারা। কিছু এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে উপত্যকাটিতে আরোপিত কড়াকড়ি চলতি সপ্তাহে কিছুটা শিথিল করা হলেও বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়ার পর শুক্রবার সকাল থেকেই আবারও অচল করে দেয়া হয়। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান গত দুই সপ্তাহ ধরেই কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল। এ সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলিতে আহত হয় দেড়শ'র বেশি কাশ্মীরি। সরকারের এই দমন-নিপীড়নের ফলে কাশ্মীরের হাসপাতালগুলোতে ছিল আহতদের ভিড়। আর বিক্ষোভের ঘোষনায় শুক্রবার সকাল থেকেই জাতিসংঘের সংস্থার অফিসমুখী সড়কে দুই জায়গায় ব্যারিকেড দেয় ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া নগরীর অন্যান্য স্থানেও সড়কে কাঁটাতারের ব্যারিকেড সৃষ্টি করে পুলিশ। বেশিরভাগ দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে পুলিশ ছাড়া অন্যান্য গাড়ি চলতে দেখা যায়নি। পুলিশের গাড়ি থেকে কারফিউয়ের ঘোষণা দিয়ে নাগরিকদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়। বিখ্যাত পর্যটন স্পট ডাল লেক ছিল পর্যটকশূন্য। পুলিশকে লেকের পানিতে বোট নিয়ে পাহাড়া দিতে দেখা যায়। গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণার মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে পাস হয় একটি বিলও। আর ৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হয় তা। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় সেখানকার বিপুলসংখ্যক স্বাধীনতাপন্থি ও ভারতপন্থি রাজনৈতিক নেতাকেও। তবে গত কয়েকদিন ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় কড়াকড়ি শিথিল করতে দেখা যায়। রাস্তাঘাটে বেড়েছিল যানবাহনের উপস্থিতি। সন্ধ্যার দিকে দোকানগুলোও খোলা হচ্ছিল। কিন্তু জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে আবারও আগের অবস্থায় ফিরে আসে কাশ্মীর উপত্যকা। এদিন শ্রীনগরে 'জাতিসংঘে চলো' (ইউএন চলো) নামক বিক্ষোভ ও সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কায় স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। বড় ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জাতিসংঘ কার্যালয়ের আশপাশে এসএসবি, সিআরপিএফ ও জেকেপি সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়। শ্রীনগর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে অবস্থিত মসজিদগুলো শুক্রবার বন্ধ রাখা হয়। খোলা ছিল কলোনির ভেতরের মসজিদগুলোও। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, বড় ধরনের জনসমাবেশ ঠেকাতে বিধিনিষেধ আরোপ জরুরি। নাহলে 'দুর্বৃত্তরা' সমস্যা তৈরি করতে এবং সহিংসতা উসকে দিতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও ল্যান্ডফোন যোগাযোগের সুযোগ সীমিত হওয়ার কারণে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শ্রীনগর শহরের কেন্দ্রীয় এলাকা এখনো অস্থিতিশীল আছে। সেখানকার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটার খবরও পাওয়া গেছে। উলেস্নখ্য, চলতি সপ্তাহেই শ্রীনগরের দেয়াল ছেয়ে যায় প্রতিবাদী পোস্টারে। শহরটিতে অবস্থিত ভারত-পাকিস্তান নিয়ে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক সংস্থার দপ্তর অভিমুখে মিছিলের ডাক দেয়া হয়েছিল। কাশ্মীর ইসু্যতে ভারত-পাকিস্তান প্রথম যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে এই দপ্তরটি এখানে স্থাপন করা হয়। এই পর্যবেক্ষক সংস্থাটি দুই দেশের যুদ্ধ ও অস্ত্রবিরতি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। কাশ্মীরে গণহত্যার আশঙ্কা মানবাধিকার সংস্থার এদিকে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গণহত্যা হতে পারে বলে সতর্কত করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন 'জেনোসাইড ওয়াচ'। সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বলছে, কাশ্মীরে গণহত্যা সংক্রান্ত লক্ষণগুলো এখন স্পষ্ট। জেনোসাইড ওয়াচ মূলত গণহত্যা রোধে কাজ করে থাকে। তারা সামগ্রিক অনুঘটন বিশ্লেষণ করে গণহত্যা হতে পারে কি-না, তার অনুমান ও তা রোধসহ দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে তৎপরতা চালায়। গণহত্যা প্রতিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওই সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, কাশ্মীরে গণহত্যা হতে পারে।