আক্রান্ত 'পৃথিবীর ফুসফুস'

আমাজনে দাবানল :ক্ষোভ দেশে দেশে

সমালোচনার মুখে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিলেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দাবানলে পুড়ছে আমাজন বনাঞ্চল
যাযাদি ডেস্ক ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় আমাজন জঙ্গলে আগুন জ্বলছে- এমন অভিযোগে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশবাদীরা। শুক্রবার প্যারিস, লন্ডন, মাদ্রিদ, বোগোটো ছাড়াও বিভিন্ন শহরের ব্রাজিল দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে আগুন নেভাতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মুখে শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাজনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বলসোনারো। শুক্রবার তিনি আদিবাসীদের ভূমি, সীমান্ত এলাকা ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগারগুলোর সুরক্ষায় চিরহরিৎ বনটিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, ট্রিবিউন, রয়টার্স রেকর্ড গতিতে প্রতিদিন পুড়ছে 'পৃথিবীর ফুসফুস' খ্যাত আমাজন বন। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা 'ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্স' (আইএনপিই) বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্রাজিলে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকান্ড হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আগুনের ঘটনা আমাজন জঙ্গলে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। পরিবেশবাদীরা বলছেন, আমাজনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার সরকারি নীতির কারণেই আগুন লাগানোর উৎসব শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস 'গভীর উদ্বেগ' জানিয়ে বলেছেন, 'বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের মধ্যে আমরা অক্সিজেন ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম প্রধান উৎসের এমন ক্ষতি মেনে নিতে পারি না। আমাজনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।' আমাজনে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব নেতারা ছাড়াও সেলিব্রেটিরাও আগুন নিয়ে ব্রাজিল সরকারের সমালোচনা শুরু করেন। শুক্রবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ব্রাজিল দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শত শত পরিবেশবাদী। 'ইয়ুথ ফর ক্লাইমেট' নামে একটি গ্রম্নপ এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। 'আমাজনের জন্য প্রার্থনা', 'আমাজন থাকুক, বলসোনারো সরে যাও', 'বন ছাড়া আমরা ধ্বংস হবো'সহ নানা ধরনের স্স্নোগান লেখা পস্ন্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। অনেক বিক্ষোভকারী রক্তের আদলে রং মেখে বিক্ষোভে অংশ নেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয় ওই বিক্ষোভ থেকে। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়। ব্রাজিলের আগুনের ছবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা। অনেকেই 'বয়কট ব্রাজিল' লেখা প্রতীক হাতে নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। কট্টর ডানপন্থি প্রেসিডেন্টের আমাজন নীতির কারণেই এবারের এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ড বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের। লন্ডনে ব্রাজিল দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয় পরিবেশবাদী গ্রম্নপ 'এক্সটিঙ্কশন রেবেলিয়ন'র কর্মীরা। বলসোনারোকে আমাজন জঙ্গল রক্ষার আহ্বান জানানো হয় ওই বিক্ষোভ থেকে। সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায় ব্রাজিল দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভকারীরা গ্যাস মাস্ক পরে অবস্থান নেন। ব্যানার নিয়ে অবস্থান নিয়ে রাস্তা আটকে দেন তারা। আমাজন বনাঞ্চলের প্রায় ৬০ শতাংশের অবস্থান ব্রাজিলে। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া আর প্যারাগুয়েতেও ছড়িয়ে আছে এই বনাঞ্চল। আগুন মূলত ছড়িয়ে পড়েছে ব্রাজিলের অংশে। সম্প্রতি দেশটির উগ্র ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো বলেছেন, 'আমাজনের আগুন ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ফলে এটি নিয়ে কারও নাক গলানো সহ্য করা হবে না।' তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মুখে শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাজনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বলসোনারো। বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে এরই মধ্যে সেখানে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। তবে ঠিক কবে নাগাদ সেনা মোতায়েন করা হবে; এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাননি তিনি। অবশ্য তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে তার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে আমাজনের সুরক্ষাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন বলসোনারো। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ইউরোপীয় দেশগুলোর দেয়া তীব্র চাপের মুখে অনেকটা বাধ্য হয়েই বোলসোনেরো সেনা মোতায়েনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। টানা কয়েকদিনের অগ্নিকান্ডের পরও ব্রাজিলের দিক থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে না পেয়ে ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অনুমোদন না করার হুমকি দেয়। ব্রাজিল ছাড়াও ওই চুক্তিতে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে আছে। এদিকে, আমাজনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্রাজিলের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ ফিনল্যান্ড দেশটি থেকে গো-মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করতেও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনুরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। ইউরোপের নেতাদের এমন অবস্থানের পর সুর নরম করে বোলসোনেরো বলেন, দাবানল শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অজুহাত হতে পারে না।