অবরুদ্ধ কাশ্মীর

শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকেই ফিরে এলেন রাহুল

উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতেই রাহুলসহ অন্য নেতাদের এ সফর

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শ্রীনগর বিমানবন্দরে রাহুল গান্ধী
যাযাদি ডেস্ক ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পরিস্থিতি বুঝতে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা তো দূর অস্ত, উপত্যকার ভেতরেই ঢুকতে পারলেন না কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ বিরোধীদলীয় নেতারা। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। শনিবার রাহুলের সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, ডিএমকের তিরুচি শিবা, আরজেডির মনোজ ঝাঁ এবং তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদীসহ মোট ১২ জন। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, পিটিআই বিরোধীদের পরিকল্পনা ছিল, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া। তবে এদিন তাতে সফল হননি তারা। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে সোজা দিলিস্নর বিমান ধরতে হয় তাদের। প্রতিনিধি দলে ছিলেন কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা ও গুলাম নবি আজাদ। শ্রীনগরের বিমান ধরার আগে দিলিস্নতে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন আজাদ। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সেখানে ক্ষোভ প্রকাশ করে আজাদের বলেন, 'আমরা সবাই দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল ও নেতা। আমরা আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে যাচ্ছি না। জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি খুবই আশঙ্কাজনক। ২০ দিন ধরে উপত্যকা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে কোনো খবর মিলছে না। অথচ সরকার বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাই যদি হয়, তবে আমাদের সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না কেন? এ ধরনের দ্বিচারিতা কখনো দেখিনি। পরিস্থিতি যদি এতই স্বাভাবিক হতো, তবে আমাদের সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না কেন?' ভারতের বিরোধী নেতারা যে এই সময় কাশ্মীর উপত্যকায় স্বাগত নন, তা অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তর। শুক্রবার ওই দপ্তর থেকে টুইট করা হয়, 'বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে উপত্যকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফেরানোর পথে বাধার সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনুরোধ, এ সময় শ্রীনগরে আসবেন না, মানুষজন অসুবিধায় পড়তে পারে। বিশেষ করে এমন এক সময় যখন সরকার ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিষ্ক্রিয় করে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে সীমান্তপারের সন্ত্রাসের আশঙ্কা, জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।' তবে রাহুলের দলকে শ্রীনগরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া নিয়ে শুরু থেকেই দেশটির সংবাদ মাধ্যম সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। কারণ, বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক নেতাকে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যটিকে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলে ভাগ করে। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই সেখানে বিশেষ করে রাজ্যের সবচেয়ে বড় নগরী শ্রীনগরে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং নানা জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাহুলের আগে কংগ্রেস পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা গুলাম নবি আজাদ দু'বার কাশ্মীর যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। দুইবারই তাকে জম্মু বিমানবন্দরে আটকে দিয়ে জোর করে দিলিস্ন পাঠিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তিনি এ চেষ্টা করেছিলেন। কংগ্রেস নেতা রাহুলকে অবশ্য জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিক গত ১১ আগস্ট পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখতে কাশ্মীর সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখন তিনি রাহুলের জন্য কেন্দ্র থেকে দেয়া বিমান পাঠাতেও চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'আমি রাহুল গান্ধীকে এখানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি আপনাকে উড়োজাহাজ পাঠাবো, যাতে আপনি এখানে এসে পরিস্থিতি দেখে তারপর কথা বলেন। আপনি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং আপনার এভাবে না দেখে কিছু বলা উচিত না।' জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর রাহুল বলেছিলেন, তিনি সেখানে 'সংঘর্ষ এবং বহু মানুষের মৃতু্যর' খবর পাচ্ছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর তাকে ওই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গভর্নরের আমন্ত্রণ পাওয়ার দুই দিন পর রাহুল তা গ্রহণ করেন। কিন্তু ততক্ষণে গভর্নর তার মত বদলে আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করেন এবং রাহুলের ভ্রমণের ওপর কিছু শর্ত আরোপ করে বিবৃতি দেন। গভর্নর মালিক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'রাহুল গান্ধী তার সঙ্গে বিরোধীদলের প্রতিনিধিদের আনতে চেয়ে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন। যা আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং এখানে সাধারণ মানুষ অসুবিধায় পড়তে পারেন।'