কাশ্মীর ইসু্য

জঙ্গিবাদের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করার ভারতীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এর ফলে ওই অঞ্চলে সক্রিয় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রম্নপ জঙ্গিবাদের ঝুঁকে পড়তে পারে। দিলিস্নভিত্তিক 'ইনডিয়ান ইন্সটিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট'র রাজনৈতিক বিশ্লেষক অজাই সাহনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরেই ভারতীয় কাশ্মীর খুবই উত্তপ্ত অঞ্চল হয়ে আছে। তার মতে, ভারত মূলত দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এটি প্রতিরোধহীনভাবে যাবে না। যদিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা বা প্রত্যাঘাত প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গ্রম্নপ সক্রিয়। তাদের মধ্যে রয়েছে জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়্যবা। লস্করের আরও দুটি আক্রমণকারী সংগঠন রয়েছে : জামায়াত-উদ-দাওয়া (জেইউডি) ও ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত (এফআইএফ)। দুটিই গরিব মানুষদের সহায়তার আড়ালে কাশ্মীর ইসু্যতে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। এলইটি, জেইউডি ও এফআইএফ পরিচালনা করেন হাফিজ সাইদ। যুক্তরাষ্ট্র তাকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করেছে, তিনি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরিকল্পনাকারী বলে অভিযোগ রয়েছে। এলইটির মতো কয়েকটি গ্রম্নপ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সহায়তা পায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে পাকিস্তান এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। পাকিস্তানভিত্তিক রাজনৈতিক দল জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) প্রধান তৌকির গিলানি অখন্ড কাশ্মীরে বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি এই অঞ্চলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, পাকিস্তান এর সুযোগ নিতে পারে। গিলানি বলেন, পাকিস্তানি এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক যুদ্ধবিরতি রেখায় চলে যেতে পারে। তারা মনে করতে পারে, হয় এখন, নয়তো কখনোই নয়। তবে, সাহনি এই হুমকি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সন্ত্রাসী গ্রম্নপগুলোকে পাকিস্তানের সমর্থন করার বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খুবই সচেতন। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট সজ্জিত। তার মতে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাকিস্তানের পক্ষে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেয়া সম্ভব হবে না। ফলে কাশ্মীরে পাকিস্তান যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন দিতে পারবে না, সে ব্যাপারে ভারতের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি চলতি বছরের প্রথম দিকে ক্ষমতায় ফেরে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে। ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করার ফলে অ-কাশ্মীরিরাও এখন থেকে সেখানে জমি কিনতে পারবে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এর ফলে স্থানীয় জনসংখ্যার চিত্রে পরিবর্তন আসবে এবং মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির জনমিতি বদলে যাবে। ওই অনুচ্ছেদে স্থানীয় জনসাধারণকে আরও কিছু বিশেষ অধিকার ও সুবিধা দেয়া ছিল। অনুচ্ছেদটি বাতিলের ফলে সেটা আর বজায় থাকলো না। ভারত সরকারের ওই পদক্ষেপের পর থেকে বন্দি থাকা কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও মনে করেন, 'ভারত চায় স্থানীয় জনসংখ্যায় পরিবর্তন আনতে। তিনি বলেন, তারা স্রেফ আমাদের ভূখন্ড দখল করতে চায়, মুসলমান সংখ্যাগুরু রাজ্যটিকে সংখ্যালঘু একটি রাজ্যে পরিণত করতে চায়। তারা চায়, আমাদের শক্তি পুরোপুরি শেষ করে দিতে।' ভারতের পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের জনসংখ্যায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি নাকচ করে দেননি সাহনিও। তবে তিনি বলেন, অতীতে পাকিস্তানও তাদের আজাদ কাশ্মীরে একই কাজ করেছে। তিনি বলেন, কাশ্মীরি আন্দোলন (স্থানীয় প্রতিরোধ) টেকসই হবে না। কারণ, পাকিস্তান এরই মধ্যে গিলগিট-বাল্টিস্তানের জনসংখ্যায় পরিবর্তন এনেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান এরই মধ্যে অকাশ্মীরিদের কাশ্মীরী ভূখন্ডে প্রবেশ করিয়েছে। অবশ্য, স্থানীয় কাশ্মীরি গ্রম্নপগুলো ইসলামিক স্টেট ও আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রম্নপগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। নিউইয়র্কভিত্তিক কাশ্মীর মিশন ইউএসএর নির্বাহী পরিচালক মালিক নাদিম আবিদ বলেন, আন্তর্জাতিক ইসলামি চরমপন্থি গ্রম্নপগুলো যে কাশ্মীরের ব্যাপারে আগ্রহী, তা কাশ্মীরি গ্রম্নপগুলোও জানে। তিনি বলেন, আইএস ও আল-কায়েদার মতো গ্রম্নপগুলো যাতে কাশ্মীরি গ্রম্নপগুলোতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য পুরোপুরি সচেতন থাকতে হবে। এটি ১০০ ভাগ স্থানীয় আন্দোলন। এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে কাশ্মীরি নেতাদের মাধ্যমে। এরপরও কাশ্মীরে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর