আক্রান্ত 'পৃথিবীর ফুসফুস'

আমাজনে নতুন করে আগুন হাজারেরও বেশি জায়গায়

যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের আগুন ভয়াবহ কেন্দ্রীয় সরকারের শরণাপন্ন হয়েছে ছয়টি রাজ্য

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো
যাযাদি ডেস্ক গত ১৫ আগস্ট থেকে জ্বলছে 'পৃথিবীর ফুসফুস' খ্যাত ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গল। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে নতুন করে আমাজনের এক হাজার ২০০টি স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা 'ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্স' জানিয়েছে, ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৪ হাজার দফায় অগ্নিকান্ডের শিকার হয়েছে এই বনভূমি। তবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের আগুন সবচেয়ে ভয়াবহ। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, ট্রিবিউন, গার্ডিয়ান আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থি ও বাণিজ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর নীতিকে দায়ী করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বন পুড়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের নীতির জন্য নিজ দেশের পরিবেশবাদীদের কাছেও তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। সর্বশেষ আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার ঘটনায় দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রাজিলিয়ান অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে অন্য দেশগুলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাপের মুখে শনিবার আমাজনে সেনা মোতায়েন করে বলসোনারো সরকার। বিস্তৃত বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে নতুন করে হাজারের বেশি জায়গায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার খবর এলো। নতুন করে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের শরণাপন্ন হয়েছে ছয়টি রাজ্য। বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ রকমের আগুনের কুন্ডলী তৈরি হয়েছে। এসব রাজ্যের কর্তৃপক্ষ আগুন নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীর সহায়তা চাইছে। শনিবার দেশটির পরিবেশমন্ত্রী রিকার্ডো সেলেস জানান, সেনা সহায়তা চাওয়া রাজ্যগুলো হচ্ছে পারা, রন্ডোনিয়া, রোরাইমা, টোকানটিন্স, একর এবং ম্যাটো গ্রোসো। আগুন নিয়ন্ত্রণে ৪৪ হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফার্নান্দো আজেভেদো। যেসব রাজ্য থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে, সেসব রাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে দুটি সি-১৩০ হারকিউলিস এয়ারক্রাফট ব্যবহার করবে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এসব এয়ারক্রাফট ১২ হাজার লিটার পানি ছিটাতে সক্ষম। ফার্নান্দো আজেভেদো বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তার কথা বললেও বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে কোনো সহায়তা দিচ্ছে না। এক ফোনালাপে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোকে ওই সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপর এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে নীরব থাকলেও আমাজন জঙ্গলকে বাঁচাতে বিমান থেকে পানি ঢালার উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে সুপারট্যাংকার বোয়িং বিমান ৭৪৭-৪০০ ভাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। শুক্রবার থেকেই আকাশপথে ওই সুপারট্যাংকার নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে যেকোনো পদক্ষেপকে সম্মানের সঙ্গে স্বাগত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেনের জোগান দেয়া আমাজনের ভয়াবহ এই আগুন আদতে কোনো দুর্ঘটনা নয়। সেখানে যে আগুন জ্বলছে, এর বেশিরভাগই লাগাচ্ছে কাঠুরে ও পশুপালকরা। গবাদিপশুর চারণভূমি পরিষ্কার করতে এসব আগুন লাগানো হচ্ছে। আর এতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন ট্রাম্পপন্থি হিসেবে দেশটির উগ্র ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো। তিনি 'ব্রাজিলের ট্রাম্প' হিসেবেও পরিচিত। আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাজনে আগুন লাগানোর ঘটনায় ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় দেশটি থেকে গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ব্রাজিলের গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করার কথা দ্রম্নত ভাবার আহ্বান জানান। চাপের মুখে সেনা মোতায়েন করা হলেও টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, পুরো বিশ্বেই বনাঞ্চলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে এটিকে ব্রাজিলের ওপর সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো যেতে পারে না। আমাজন ধ্বংসের মাধ্যমে ব্রাজিল সরকার আত্মঘাতী পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।