অবরুদ্ধ উপত্যকা

কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় :রাহুল

মোদি সরকারকে তোপ প্রিয়াঙ্কার বাঁচার আকুতি এক কাশ্মীরি মহিলার বিব্রত ভারতীয় কর্মকর্তার পদত্যাগ

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী
যাযাদি ডেস্ক ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়ার একদিন পর রোববার তিনি গণমাধ্যমের সামনে এমন মন্তব্য করেন। রাহুল বলেন, 'আমরা জানতে চেয়েছিলাম, সেখানকার মানুষ কেমন আছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জনগণকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বিমানবন্দর থেকে বেরোতে দেয়া হয়নি। সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদেরও হেনস্তা করা হয়েছে। এটা পরিষ্কার, জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়।' সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ কংগ্রেসের সাবেক এই সভাপতি বলেন, 'জম্মু-কাশ্মীরের থেকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দুই টুকরা করে দেয়ার পর সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, এমনটা দেখাতে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রাজ্যপাল বিমান পাঠানোর প্রস্তাব দিলে আমি তাকে বলি, বিমান পাঠানোর দরকার নেই। তবে আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করছি। আমি কাশ্মীরে যাবো। কিন্তু উপত্যকায় ঢুকতে দিল কোথায়?' রাহুলদের সফরের আগে শনিবার জম্মু-কাশ্মীরের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের এক টুইটে বলা হয়েছিল, সীমান্ত সন্ত্রাস এবং হামলা থেকে উপত্যকার মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে সরকার। এমন সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের শ্রীনগরে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ তাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হতে পারে। তবে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে রাহুল গান্ধী এবং তার সঙ্গে থাকা ১১ নেতা জানিয়েছিলেন, তাদের সফর নিয়ে আশঙ্কা ভিত্তিহীন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'আমরা দায়িত্ববান রাজনৈতিক নেতা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আমাদের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ ও মানবিক।' শ্রীনগর বিমানবন্দরে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডিএমকে নেতারা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, ডিএমকে নেতা ত্রিরুচি শিবা, আরজেডি নেতা মনোজ ঝা এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দীনেশ ত্রিবেদি। এদিকে, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও তার ভাই রাহুলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিজেপি সরকারের ওপর তোপ দেগেছেন। রোববার এক বার্তায় রািজব-তনয়া বলেন, 'হচ্ছেটা কী? আর কত দিন চলবে এসব জাতীয়তাবিরোধী কার্যকলাপ? কতদিন চলবে এই নোংরা রাজনীতি?' তার অভিযোগ, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই কাশ্মীরিদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। উপত্যকায় এখন যেভাবে মানবিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে, তার চেয়ে বড় রাজনীতি আর বড় জাতীয়তাবিরোধী কার্যকলাপ আর কিছু হতে পারে না।' রাহুলের কাছে বাঁচার আকুতি এক কাশ্মীরি মহিলার শনিবার জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকতে দেয়া হয়নি রাহুল গান্ধীদের। ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকেই। সেই যাত্রাপথেই বিমানের মধ্যে এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতিসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা, যা অস্বস্তি বাড়তে পারে মোদি সরকারের। বিমানের মধ্যেই রাহুলের সামনে কেঁদে ফেলেন কাশ্মীরের এক মহিলা। রাহুলকে শোনান তার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা। আর তাতেই দ্বিখন্ডিত করার পর উপত্যকার অভ্যন্তরের আরও এক খন্ডচিত্র চলে এলো প্রকাশ্যে। রাহুলকে ওই মহিলা বলেন, 'আমার ছেলেমেয়েকে ঘর থেকে বাইরে বেরোতে দেয়া হচ্ছে না। আমার ভাই হৃদরোগে আক্রান্ত। ১০ দিন ধরে তিনি ডাক্তার দেখাতে পারেননি। আমরা খুব বিপদে আছি।' এই কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। এ সময় রাহুলকে দেখা যায় তাকে সান্ত্বনা দিতে। বিব্রত ভারতীয় কর্মকর্তার পদত্যাগ অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের লাখ লাখ মানুষের 'মৌলিক অধিকার' খর্ব করায় বিব্রত এক ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা (আইএএস) কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরের লোকদের 'মৌলিক অধিকার' খর্ব করা তার পদত্যাগের অন্যতম কারণ বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আইএএস কর্মকর্তা কান্নান গোপীনাথন। তিনি বলেন, 'আমরা পদত্যাগের কারণে কোথাও কোনো প্রভাব পড়বে না, কিন্তু আমার মনে হয় নিজের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থাকা উচিত।' তিনি আরও বলেন, 'কাশ্মীরে ২০ দিন ধরে লাখ লাখ মানুষের মোলিক অধিকার স্তব্দ হয়ে আছে, আর ভারতের অনেকের কাছেই এটি ঠিক আছে বলে মনে হচ্ছে। ২০১৯ সালে ভারতে এটি ঘটছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর নাগরিকদের এটি নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার দেয়া হচ্ছে না, এটাই প্রধান ইসু্য।'