আমাজনের দাবানল উদ্বেগজনক

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পুড়ছে আমাজন বনাঞ্চল
যাযাদি ডেস্ক ব্রাজিলে আমাজনের জঙ্গলে হাজার হাজার জায়গায় আগুন জ্বলছে। গত এক দশকে এত ব্যাপক মাত্রায় সেখানে দাবানল সৃষ্টি হয়নি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরাঞ্চলে রোরাইমা, একার, রনডোনিয়া এবং আমাজোনাস্‌ রাজ্যে, পাশাপাশি মাতো গ্রোসো ডো সুল এলাকাতে। সামাজিক মাধ্যমে আগুনের যেসব ছবি শেয়ার করা হয়েছে বা এই আগুনের যেসব ছবি আপলোড করা হচ্ছে, সেগুলো কয়েক দশকের পুরনো বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং অনেক ছবি আদৌ ব্রাজিলেরই নয়। তাহলে আসল পরিস্থিতিটা কেমন, আর সেই পরিস্থিতি আসলেই কতটা খারাপ? ব্রাজিলে আমাজনের উষ্ণমন্ডলীয় বনাঞ্চলে ২০১৯ সালে ব্রাজিলিয়ান স্পেস এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী রেকর্ডসংখ্যক দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। 'দ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ' (আইএনপিই) বলছে, তাদের উপগ্রহ থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বছর আগুন লাগার ঘটনা ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি হিসাব বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ব্রাজিলের জঙ্গলে ৭৫ হাজারের বেশি দাবানল হয়েছে। ২০১৩ সালের পর এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পুরো ২০১৮ সালে বনাঞ্চলে মোট আগুন লাগার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭৫৯। শুকনো মৌসুমে আমাজনের জঙ্গলে দাবানল একটা প্রচলিত ঘটনা। সেখানে শুকনো মৌসুমের সময়কাল জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। এই দাবানল তৈরি হতে পারে প্রাকৃতিক কারণে, যেমন বাজ পড়লে। কিন্তু কৃষক এবং কাঠুরেরাও ফসল উৎপাদনের জন্য অথবা পশু চরানোর জন্য জমি পরিষ্কার করার কারণে জঙ্গলে আগুন দিয়ে থাকে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর পরিবেশবিরোধী কথাবার্তা এভাবে জঙ্গল সাফ করার কাজকে আরও উৎসাহিত করেছে। এর জবাবে, বলসোনারো দায় চাপিয়েছেন বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপর। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি। বলসোনারো বলেছেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য নিজেরাই এই আগুনগুলো লাগিয়েছে। পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, এই দাবানল বন্ধ করার মতো সম্পদ সরকারের হাতে নেই। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেশটির উত্তরাঞ্চলে। রোরাইমা, একার, রনডোনিয়া এবং আমাজোনাস্‌- সব এলাকাতেই গত চার বছরের (২০১৫-২০১৮) তুলনায় গড়ে আগুন লাগার ঘটনা উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। রোরাইমাতে দাবানলের ঘটনা বেড়েছে ১৪১ শতাংশ, রনডোনিয়াতে ১১৫ এবং আমাজোনাসে ৮১ শতাংশ। দক্ষিণে মাতো গ্রোসো ডো সুল রাজ্যে আগুন লাগার হার বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। আগুন থেকে কুন্ডলি পাকিয়ে ওঠা ধোঁয়া আমাজনের গোটা এলাকাজুড়ে এবং আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস অ্যাটমসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের (ক্যামস্‌) তথ্য অনুযায়ী, এই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে আটলান্টিকের উপকূল পর্যন্ত। এমনকি দুই হাজার মাইলেরও বেশি দূরে সাও পাওলোর আকাশ এই ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেছে। এই আগুন থেকে ব্যাপক পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, যার পরিমাণ এ বছর ২২৮ মেগাটনের সমপরিমাণ দাঁড়িয়েছে। ক্যামস্‌ সংস্থা বলছে, এই পরিমাণ ২০১০ সালের পর সবচেয়ে বেশি। এই ধোঁয়া থেকে কার্বন মনোক্সাইডও নির্গত হচ্ছে। কাঠ পোড়ালে সচরাচর এই গ্যাস নির্গত হয়। ক্যামস্‌ যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, এতে দেখা যাচ্ছে খুবই চড়া মাত্রায় বিষাক্ত এই গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল ছাড়িয়ে এখন আরও দূরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাজন অরণ্যাঞ্চলে ৩০ লাখ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে। সেখানে বসবাস করে ১০ লাখ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এই বনাঞ্চল বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বিশাল অরণ্যাঞ্চলের গাছপালা প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন টন কার্বন শুষে নিয়ে বিশ্বের উষ্ণায়ন মোকাবিলা করে। কিন্তু গাছ যখন কাটা হয়, অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়, তখন যে কার্বন গাছের মধ্যে সঞ্চিত থাকে, তা বায়ুমন্ডলে আবার মিশে যায় এবং উষ্ণমন্ডলীয় এসব বৃক্ষের কার্বন শুষে নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। আমাজন বেসিনের আরও বেশ কিছু দেশ এ বছরের ব্যাপক দাবানলের কবলে পড়েছে। ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক আগুনের ঘটনা ঘটেছে ভেনেজুয়েলায়। সেখানে দাবানল হয়েছে ২৬ হাজারটি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বলিভিয়া, যেখানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ১৭ হাজারের বেশি। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ