শান্তি আলোচনা ভন্ডুল

যুক্তরাষ্ট্রকে তালেবানের হুঙ্কার

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে মার্কিনিদের জীবন ও সম্পদহানি বৃদ্ধি পাবে হুশিয়ারি মুখপাত্রের তালেবানকে সরাসরি আলোচনায় ডাকলেন আফগান প্রেসিডেন্ট

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় আরও বেশি মার্কিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে হুঙ্কার ছুড়েছে তালেবান। রোববার যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে জঙ্গিদের ওপর সামরিক চাপ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রম্নতি জানাচ্ছিল, তখনই তালেবানের কাছ থেকে এ প্রতিক্রিয়া এলো। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি আফগানিস্তানে ১৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কাতারের দোহায় তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের আলোচনা চলছিল। আলোচনার একেবারে শেষ পর্যায়ে দু'পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তির ঠিক আগে শনিবার হঠাৎ এক সিদ্ধান্তে শান্তি আলোচনা বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে তালেবানের মুখ্য নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের গোপন বৈঠক করার কথা ছিল। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গেও বৈঠকের পরিকল্পনা করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু গত সপ্তাহে কাবুলে চালানো এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় দায় তালেবান স্বীকার করার পর ওর গোপন বৈঠক বাতিল করেন ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার কাবুলে তালেবানের ওই হামলায় এক মার্কিন সেনাসহ ১২ জন নিহত হয়। তালেবান মুখপাত্র জবিউলস্নাহ মুজাহিদ শান্তি আলোচনা বাতিল করার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, 'ওই সময় মার্কিন বাহিনীগুলোই আফগানিস্তানে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে।' তিনি আরও বলেন, 'এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ক্ষতি হবে। তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হবে, শান্তি-বিরোধী অবস্থান বিশ্বের কাছে প্রকাশ পাবে, জীবন ও সম্পদহানি বৃদ্ধি পাবে।' এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আফগান শান্তি আলোচনা স্থগিত আছে এবং তালেবান উলেস্নখযোগ্য প্রতিশ্রম্নতিগুলো মেনে চলছে, এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওয়াশিংটন আফগান সেনাদের জন্য দেয়া মার্কিন সামরিক সমর্থন হ্রাস করবে না। রোববার এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে পম্পেও আরও বলেন, 'সামনে এগিয়ে যাওয়ার রূপরেখা প্রণয়ণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান বিষয়ক তাদের বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদকে ডেকে পাঠিয়েছে।' আফগান শান্তি আলোচনার মৃতু্য ঘটেছে কি না, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পম্পেও বলেন, 'আপাতত'। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী থাকার সময় থেকেই আফগানিস্তানের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় ইতি টানতে চাইছিলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তালেবানের কাছ থেকে নিরাপত্তা প্রতিশ্রম্নতির বিনিময়ে আফগানিস্তান থেকে কয়েক হাজার সেনা প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা। দু'পক্ষ একটি খসড়া চুক্তির বিষয়েও সমঝোতায় পৌঁছে গিয়েছিল। ক্যাম্প ডেভিডে ট্রাম্পের সঙ্গে তালেবান নেতাদের আলোচনার পর চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। আফগানিস্তানে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ হাজার সেনা রয়েছে। তালেবানের সঙ্গে তাদের প্রাথমিক সমঝোতা অনুযায়ী, শান্তিচুক্তির আওতায় ২০ সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে পাঁচ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। তালেবান-মার্কিন শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে আগেও বিতর্ক ছিল। তবে অনেকে এ নিয়ে আশাবাদীও হয়েছিলেন। তালেবানকে আলোচনায় ডাকলেন আফগান প্রেসিডেন্ট অন্যদিকে, তালেবানকে সহিংসতা বন্ধ করে আফগান সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তালেবানের সঙ্গে খসড়া শান্তিচুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্বনির্ধারিত একটি বৈঠক বাতিল ঘোষণা করার পর ঘানি রোববার এ আহ্বান জানান। ট্রাম্পের গোপন শান্তি আলোচনা বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় ঘানির কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেন, 'তালেবান যখন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে, তখনই শান্তি আসবে।' এছাড়া তালেবান সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বোমা হামলা জোরদার করেছে। আফগানিস্তানে ১৮ বছরের যুদ্ধাবসানে একটি পূর্ণ শান্তিচুক্তি নির্ভর করছে বিভিন্ন কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাসহ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টিসহ অন্যান্য ইসু্যতে আরেকটি চুক্তি হওয়ার ওপর। কিন্তু তালেবান এখন পর্যন্ত আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে। তারা আফগান সরকারকে অবৈধ এক 'পুতুল' প্রশাসন বলেই গণ্য করে। উলেস্নখ্য, ২০০২ সালের পর থেকে আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ সময়ে আন্তর্জাতিক বাহিনীর প্রায় ৩৫০০ সদস্য আফগানিস্তানে নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে মার্কিন সেনা ২৩শ'র বেশি। এক হিসাব বলেছে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৫৮ হাজার সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া ৪২ হাজার তালেবান মারা গেছে।